দাউদ কিম এর ইসলাম গ্রহণ কিন্তু কেন? | Why Daud Kim Became a Muslim? | Tazza Trendz
দাউদ কিমের মুসলমান হওয়ার গল্প
Daud Kim | দাউদ কিম এর ইসলাম গ্রহণ কিন্তু কেন?
দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় ইউটিউবার দাউদ কিম এখন বাংলাদেশে, ঘুরেছেন বাংলাদেশের পথে-ঘাটে, খাচ্ছেন দেশি খাবার আর প্রশংসাও করছেন পুরোদমে!
নিজ দেশে ইউটিউবার হিসেবে জে কিম ব্যাপক পরিচিত ছিলেন, ২৮ বছর বয়সী এই কোরিয়ান যুবকের জন্ম শেওনানে। আগে গান করতেন, এখন ইউটিউব ভিডিও তৈরি করেন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তিউনিশিয়ার মতো দেশগুলো ঘুরতে গিয়ে মুসলিম ভক্তদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তিনি ‘দাউদ কিম’ নাম ধারণ করেন।
বাংলাদেশেও অনেক ভক্ত রয়েছে দাউদ কিমের, যার ফলে সম্প্রতি বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন এই কোরিয়ান, ঢাকার লালবাগ এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বেশ মজা করলেন, লালবাগে তোলা ছবি পোস্ট করে দাউদ কিম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে এলাম, এরা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সুন্দর।
আমি যদি তাদের দিকে তাকাই তারা সব সময় হাসিমুখে উত্তর দেয়, এখানে এসে আমি খুব খুশি, তাদের আছে সুন্দর সংস্কৃতি, সুন্দর মানুষ, সুন্দর মন, আর খাবারটাও অসাধারণ, আমাকে স্বাগত জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
দাউদ কিম বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে দারুণ খুশি, একটা ভিডিও বানিয়েছেন, যেখানে তাঁকে বসুন্ধরা সিটি থেকে যমুনা ফিউচার পার্কসহ ব্যস্ত ঢাকা সবখানেই ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে, কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে লিখেছেন, ‘কাচ্চি অনেক সুস্বাদু,।
সর্বশেষ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গিয়ে একটি ছবি তুলে সেটি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, এটা সর্বশেষ শুক্রবারে তোলা সেটি উল্লেখ করেছেন কিম।
লিখেছেন, ‘ঢাকায় জুম্মা মোবারক, বাংলাদেশে সব কিছু খুব নিখুঁত, তাদের আতিথেয়তা এখনো অবিশ্বাস্য, সবাই হেসে আমাকে আশীর্বাদ করে, তারা এত খাঁটি এবং মুক্তোর মতো উজ্জ্বল, এখানে আমার প্রথমবার, কিন্তু আমি মনে করি আমি ইতিমধ্যে তাদের প্রেমে পড়েছি, আমি তোমাকে বাংলাদেশ ভালোবাসি,’
তবে কিভাবে এবং কেন মুসলিম হলো দাউদ কিম? How and Why Daud Kim Became a Muslim? তা জানতে হলে একটু পিছে ঘুরে আসা যাক!
জনপ্রিয় ইউটিউবার দাউদ কিমের ইসলাম গ্রহণের খবরটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ঘটনাটি দুই বছর পূর্বের এবং তিনি জনপ্রিয় কোরিয়ান পপ ব্যান্ড বিটিএস এর সদস্য ছিলেন না। দাউদ কিমের নিজের ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর “Finally I became a Muslim” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। দাউদ কিম যখন ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
তখন তিনি নিজের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এবং ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তিনি এ কথা নিশ্চিত করেন। তার অ্যাকাউন্টে প্রচারিত এক ভিডিওতে তাকে সিওলের একটি মসজিদের মিম্বারের সামনে কালিমা শাহাদাত পাঠ করতে দেখা যায়। ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
নিজের ইসলাম গ্রহণের সোনালী মুহূর্তটিকে সবার সঙ্গে শেয়ার করতে এবং ইসলাম গ্রহণের মধুর স্মৃতিকে হৃদয়ে জাগ্রত রাখতে নিজ চ্যানেলেই একটি ভিডিও আপলোড করেছেন। সেটি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক ভাইরাল।
কিম মুসলমান হয়েছেন কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই জানতে চান আমি মুসলিম হয়েছি কি না। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, আমি আল্লাহ্কে বিশ্বাস করি এবং হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর প্রেরিত রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করি। আজ আমি বলতে চাই, আমি কেন আল্লাহ্কে বিশ্বাস করি!
আমি মূলত ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। সে সুবাদে আমার নাম ছিল ডেভিড। অবশ্য ইসলামের একজন নবীর নামও রয়েছে দাউদ। কিন্তু আমি ক্যাথলিক জীবন একদমই পছন্দ করতাম না। আমার কাছে মনে হতো ধর্ম আসলে আমার জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু না। তবে আমি যখন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ি সম্ভবত ক্লাস সেভেনে, তখন আমি আর্থ সায়েন্স পড়ছিলাম। পৃথিবী কীভাবে তৈরি হলো, বায়ু কীভাবে তৈরি হলো, আকাশ কীভাবে তৈরি হলো, সাগর কীভাবে তৈরি হলো ইত্যাদি সম্পর্কে পড়ছিলাম।
তখন আমি ভাবতাম যে, কেন এসব তৈরি করা হয়েছে? কে এসব তৈরি করেছে? এসবের উৎস কী আসলে? কিন্তু আমাকে স্কুলে এসবের উত্তর শেখানো হতো না। আমি মনে করতাম যে, নিশ্চিয়ই কোনো কারণে কেউ এসব সৃষ্টি করেছে যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে, কোনো মহাশক্তি আছে যে এসব নিয়ন্ত্রণ করে। আপনারা জানেন, বিজ্ঞান সবকিছুর ব্যাখ্যা দিতে পারে না। তাই কিছু না কিছুতে বিশ্বাস করতে হয়। ফলে আমিও বিশ্বাস করতাম, কিন্তু ক্যাথলিকদের মতো করে নয়। কারণ, আমি এটা মানতে পারতাম না যে, একজন মানুষ কখনো ঈশ্বর হতে পারে। সেই সঙ্গে এটাও আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগত যে, আদমের কারণে জন্ম থেকেই একজন মানুষ কেন পাপী হতে পারে।
এর কিছুকাল পরে কিছু মুসলিমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ফলে আমার অনেক ধারণা বদলে যায়। মিডিয়ার জন্য ইসলামের প্রতি আমার খুব বাজে ধারণা ছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ফলে তাদের জীবনব্যবস্থা, ব্যবহার-আচার সমস্ত কিছু আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করে। আমরা সবাই এসব জানি, কিন্তু মানি না। তবে মুসলমানরা মানে। পরে আমি জানতে পারলাম যে, তারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে। এ জন্য আমি আল্লাহ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। কোথা থেকে এলাম আমি? কেন এলাম? এসব প্রশ্নের উত্তরই আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন এ সংক্ষিপ্ত জীবনে আমাদের কী করা উচিত। ক্যাথলিসিজমের অনেক কিছু আমার জন্য বোঝা কঠিন ছিল। কিন্তু কুরআনে সবকিছু ছিল পরিষ্কার। আল্লাহ একমাত্র স্রষ্টা। যদি আমি কোনো ভুল করি তার জন্য আমি একাই দায়ী। এ রকম সুন্দর সুন্দর ধারণা।’
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর নিজের পুরোনো নাম বদলে নাম রাখেন দাউদ কিম। অবশ্য জন্মসূত্রে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান হওয়ার ফলে তার নাম ছিল ডেভিড। তাই জে কিম জানান, ‘আমি মনে করি, দাউদ নামকরণ করার ফলে আমার নামটি আরও অর্থবহ হলো, যেহেতু ক্যাথলিক হওয়ার কারণে একসময় আমার নাম ডেভিড ছিল।’ অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের একজন বিখ্যাত নবীর নামও রয়েছে দাউদ।
জে কিমের এ সিদ্ধান্তে ভক্তকুল প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তার ইসলাম গ্রহণের ভিডিওটি ইতিমধ্যে দুই মিলিয়নের বেশি বার দেখা হয়েছে। অসংখ্য মানুষ তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে এ উপলক্ষ্যে। কিমের ইসলাম গ্রহণ করার ফলে শুধু কোরিয়াতেই নয়; বরং বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা অনুপ্রাণিত।
আল্লাহ তাআলা দাউদ কিমকে ইসলামের জন্য কবুল করুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ইসলামের জন্য কাজ করার তাওফিক দান করুন। খাঁটি মুসলিম হিসেবে তাঁকে কবুল করুন। আমিন।
No comments