উত্তর কোরিয়ার ‘অদ্ভুত’ সব নিষেধাজ্ঞা; যার কারনে পৃথিবীর বাকি দেশগুলি থেকে আলাদা বলা হয়! | North Korea illegal Activities
উত্তর কোরিয়ার ‘অদ্ভুত’ সব নিষেধাজ্ঞা; যার কারনে পৃথিবীর বাকি দেশগুলি থেকে আলাদা বলা হয়!
পৃথিবীর অনেকে দেশে রয়েছে রক্ষণশীল শাসনব্যবস্থা। এসব দেশে অনেক পোশাক নিষিদ্ধ।এর কারণও মোটামুটি একই। ওই পোশাকগুলো দেশের সংস্কৃতির পরিপন্থী।
উত্তর কোরিয়াতেও রয়েছে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা। তবে সব ক’টির কারণ এক নয়।
শুধু পোশাক নয়, দেশটিতে নিষিদ্ধ রয়েছে অনেক ধরনের সাজের কায়দা। Tazza Trendz এর আজকের এই বিশেষ পর্বে আপনাদেরকে জানাব এমনই উত্তর কোরিয়ার ‘অদ্ভুত’ সব নিষেধাজ্ঞাবলী। যেগুলো শুনলে আপনি রীতিমতো অবাক হয়ে যাবেন। তাহলে, আসুন জেনে নিই, উত্তর কোরিয়ার ‘অদ্ভুত’ নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে।
১.নামদামি কোম্পানির টি-শার্ট: বিশ্বের নামিদামি টি-শার্ট প্রস্তুতকারী কোম্পানির অনেকগুলো ইউরোপ এবং আমেরিকার প্রতিষ্ঠান। উত্তর কোরিয়ায় সেই সব কোম্পানির টি-শার্ট পরিধানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে দেশে তৈরি টি-শার্ট পরতে পারেন নাগরিকরা।
নামদামি কোম্পানির টি-শার্ট | what are not allowed in North korea?
২.আঁটো জিন্স: উত্তর কোরিয়ার শাসকের মতে, এটি দেশের সংস্কৃতির পরিপন্থী। একেবারে পশ্চিমী সংস্কৃতির অঙ্গ আঁটো জিন্স। তাই দেশটির শাসক কিম জং উন এ ধরনের প্যান্ট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
আঁটো জিন্স | North Korea illegal Activities
৩.ছেঁড়া জিন্স: আঁটো জিন্সের মতো নিষিদ্ধ ছেঁড়া জিন্স। কারণও সেই এক। এটি পশ্চিমের সংস্কৃতির অঙ্গ।
৪.ফুটো করানো: নাক বা ঠোঁট ফুটো করানো দেশটিতে একেবারে নিষিদ্ধ। খুব বেশি হলে কানে ফুটো করানো যেতে পারে। তাও একটির বেশি নয়।
নাক বা ঠোঁট ফুটো করানো | North korea rules for ladies
৫.চুলের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা : ২০১৩ সাল থেকে চুলের স্টাইলও নির্ধারণ করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়ার সরকার। সেখানে ২৮ ধরনের চুলের স্টাইল করার অনুমতি রয়েছে। এর মধ্যে মেয়েদের জন্য ১৮ প্রকার ও ছেলেদের জন্য ১০ প্রকার চুলের স্টাইল করার অনুমতি রয়েছে। এর মধ্যে থেকেই পুরুষদের যে কোনও একটি বেছে নিতে হয়। এর বাইরে নতুন কোনও কায়দায় চুল কাটা যায় না। তবে যদি কারোর ওই স্টাইল পছন্দ না হয় তাহলে আপনার তাদের কাছে একটা অপশান থাকে সেটি হল টাক হয়ে যাওয়া। তবে এই নিয়ম শুধুমাত্র প্রযোজ্য নয় ওখানকার শাসক কিম জং উনের ক্ষেত্রে। তিনি নিজের ইচ্ছে মতো চুলের স্টাইল করতে পারেন। তবে কিম জং উন মতো করে চুলের স্টাইল করলে সেই ব্যাক্তিকে মৃত্যুবরন করতে হয়। আর বিয়ে না হলে উত্তর কোরিয়ায় বড় চুল রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রং তো মোটেই নয়।
৬.চামড়ার ট্রেঞ্চ কোট: এই বিশেষ ধরনের কোট পরেন খোদ কিম জং নিজে। ফলে দেশের আর কারও এ ধরনের কোট পরার অধিকার নেই।
৭.চশমা: উত্তর কোরিয়ায় চশমার ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সেই চশমার সঙ্গে যেন কিম জং উনের চশমার কোনও মিল না থাকে। বিশেষ করে রঙে।
৮.তিন প্রজন্মকে শাস্তি : উত্তর কোরিয়া যদি কেউ অপরাধ করে তবে, সেই অপরাধের জন্য তিন প্রজন্মকে শাস্তি দেওয়া হয়। দাদা-দাদী, বাবা-মা ও সন্তানকে সেই অপরাধের শাস্তি মাথা পেতে নিতে হয়। এমন অদ্ভুত শাস্তির দ্বারা অপরাধী যাতে শাস্তি থেকে রক্ষা না পায় তা নিশ্চিত করে! কেউ উত্তর কোরিয়ান কঠিন আইনকানুন থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইলে ভোগ করতে পারেন কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি। পালাতে গিয়ে ধরা পড়লে তাদের কঠিন সব কাজে পাঠানো হয়। গুরুতর শাস্তি দেওয়া হয়। এছাড়াও দেওয়া হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।
তিন প্রজন্মকে শাস্তি | 3 Generation Punishment In North Korea
৯.পড়াশোনা : এখানে পড়াশুনো শেখা খুবই ব্যয়বহুল যার ফলে সবাই পড়াশুনো করতে পারে না। কারন ওখানকার স্কুলে পড়ার খরচ তো দিতে হয় তার সাথে এই স্কুলের চেয়ার, টেবিলেরও খরচ দিতে হয়।তাই যারা ধনী ব্যাক্তি তারাই তাদের ছেলে মেয়েদের পরাতে সক্ষম হয়।
১০.ইতিহাস : এখানকার স্কুলে বাচ্চাদের ইতিহাস তো পড়ানো হয়।তবে সেই ইতিহাসের বিষয়বস্তু হল শুধুমাত্র কিম জন উন এবং কিম ইল সুং এর বীরত্বের কথা আর অন্য কিছুই নয়।
১১.নির্বাচন : উত্তর কোরিয়া এমন একটি দেশ যেখানে ৫ বছর অন্তর ভোট তো হয় কিন্তু সেখানে একজনই প্রার্থী তিনি হলেন কিম জং উন আর অন্য কোনো বিরুদ্ধি পক্ষ নেই।ওখানকার মানুষের কাছে শুধুমাত্র নির্বাচন করার একটায় অপশান থাকে তাও সবাইকে ভোট দিতেই হয়।
১২.ভ্রমণ : উত্তর কোরিয়া থেকে বাইরের দেশে খুব সহজে ভ্রমণের অনুমতি মেলে না। সরকার অনুমতি না দিলে বাইরের দেশে ছুটি কাটানো এমন কী পার্শ্ববর্তী দেশ দক্ষিণ কোরিয়াতে স্বল্প সময়ের জন্যও ভ্রমণ করতে যাওয়া যাবে না.
আবার বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত শাসন ব্যবস্থা থাকলেও আপনার উত্তর কোরিয়া ভ্রমণের অনুমতি মিলতে পারে। তবে সেখানে কখনোই একা একা ঘুরতে পারবেন না। সেখানে কিছু গাইড থাকবে যারা সার্বক্ষণিক আপনাকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন। এছাড়াও ভ্রমণকারী যারা সেখানে যাবেন বা সেখান থেকে বাইরের দেশে যাবেন সকলেরই ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার চেক করা হবে।
ভ্রমণ | It is not easy to get permission to travel abroad from North Korea
১৩.সরকার নির্ধারিত টেলিভিশন চ্যানেল : আমাদের দেশে বর্তমানে সরকারি চ্যানেল ছাড়াও অনুমোদিত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে ৪৪টি। এছাড়াও চাইলেই ইন্টারনেটের ও ডিস অ্যান্টেনার মাধ্যমে বিশ্বের নানা প্রান্তের চ্যানেল দেখতে পারি। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার অধিবাসীরা চাইলেই তা পারেন না। তাদের ওখানে মাত্র চারটি টেলিভিশন চ্যানেল দেখার অনুমতি রয়েছে। আবার সেই চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানগুলো সরকারিভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়।
১৪.ইন্টারনেট : উত্তর কোরিয়ায় ইন্টারনেট সরবরাহ কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। তবে সেখানে নির্দিষ্ট কিছু পেশার জন্য কিছু ওয়েবসাইটে সরকারি তত্বাবধানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
ইন্টারনেট | Internet access is strictly prohibited In North Korea
উপরিউক্ত আইনকানুন ছাড়াও আরও কিছু শাসন কোরিয়ার সরকার প্রবর্তন করে থাকেন। যেমন- সেখানে নাচের আয়োজন করা যায় না, রাষ্ট্রীয় দিনে অ্যালকোহল পান নিষিদ্ধ, কিমের দাদার মৃত্যু দিবসে উচ্চস্বরে হাসতেও মানা! মোটকথা এসব অদ্ভুত আইন সরকারের একক আধিপত্যেরই পরিচায়ক বলা যায়।
No comments