আল-আকসা মসজিদ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
আল-আকসা মসজিদ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? | Al Aqsa masjid history
ফিলিস্তিনিরা কেন বীরদর্পে ইসরাইলের মারাত্মক সব অস্ত্রধায়ী সৈন্যদের সামনে দাড়িয়ে চোখ রাঙায়?
কেন সৈন্যদের পায়ের তলায় পড়লেও ব্যাথায় ফুপিয়ে না উঠে বিজয়ের হাসি হাসে?
আপনি কি তা জানেন? বিষয়টি বুজতে হলে আপনাকে জানতে হবে মসজিদুল আল আকসা সম্পর্কে।
জানতে হবে এর ইতিহাস ; এর সাথে মুসলমানদের ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে।
আল-কুদস, মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মাকদিস কিংবা বাইতুল মুকাদ্দাস। পৃথিবীর বরকতময় ও স্মৃতিবিজড়িত ফিলিস্তিনের সুন্দর সুশোভিত প্রাচীনতম জেরুজালেম শহরে অবস্থিত মুসলমানদের দ্বিতীয় পবিত্রতম মসজিদ। মুসলিম জাতির প্রথম কিবলা ও পৃথিবীর বুকে অবস্থিত— সব জাতি-বর্ণের মুসলমানদের প্রাণস্পন্দন।
অন্যদের মাধ্যমে দখলকৃত যেকোনো মুসলিম ভূখণ্ড উদ্ধার করা— সমগ্র মুসলমানদের অপরিহার্য বিষয়। তবে ইসলামের প্রথম কিবলার দেশ ফিলিস্তিনের বিষয়টি অন্যসবগুলোর চেয়েও ভিন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ।
মসজিদুল আল-আকসা হলো সেই মসজিদ যেখানে রয়েছে হযরত ইব্রাহিম আ. এবং হযরত মুসা আ. সহ অসংখ্য নবি এবং রাসুলগনের কবর। যেখানে আল্লাহর রাসুল (সা.) অন্য সব নবী ও ফেরেস্তাদের নিয়ে নামাজের ইমামতি করেছিলেন।
ইসলামের ইতিহাস ও বিশ্বনবির জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হলো মিরাজ। মিরাজ সৃষ্টি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম বড় মুজিযা। বিপদে জর্জরিত ও চাচা আবু তালিব ও প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজার ইন্তেকালে শোক জর্জরিত প্রিয়নবির অশান্ত হৃদয়ে শান্ত্বনার শীতল পরশ বুলানোর নিমিত্তে এক অসাধ্য সাধন কাজের মাধ্যমে নবুয়তের সত্যতাকে সুনির্ধারিত করতে আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবিকে একান্ত সান্ন্যিধ্যে ডেকে নেন। সৃষ্টিজগতের সেরা আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও তাৎপর্যপূর্ণ এ ঘটনাটিই হলো মিরাজ।
আর মসজিদে আকসার দেশ ফিলিস্তিনের বুকেই রচিত হয় সায়্যিদুল আম্বিয়ার সে শ্রেষ্ঠতম নৈশভ্রমনের ইতিবৃত্ত। সেসময় সৃষ্টির সেরা দুলালের পদস্পর্শে ধন্য হয় পৃথিবীর বরকতময় ও স্মৃতিবিজড়িত ফিলিস্তিন। সে রাতে নবীজি মসজিতে আকসা থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত নৈশভ্রমণ করেন। এরপর বায়তুল মাকদিস হতেই তিনি উর্ধ্বাকাশে গমন করেন। ওপর থেকে পুরো আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গন।
এ সম্পর্কে আনাস ইবনু মালিক রা. হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন- ‘বোরাক নিয়ে আসা হলো। বোরাক এমন জন্তু বিশেষ, যা ধবধবে সাদা ও দীর্ঘকায় বিশিষ্ট। গাঁধার চেয়ে বড় এবং খচ্চরের চেয়ে গঠনে ছোট। আর জন্তুটি একেক কদম রাখে দৃষ্টির শেষ সীমানায়’।
১৯৬৭ সালে পুরো জেরুজালেম দখলে নেওয়ার পর থেকেই আল-আকসা মসজিদ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে ইসরাইল। এরপর নানা বিধিনিষেধ আর শর্ত পূরণের মাধ্যমে সেখানে ইবাদতের সুযোগ পেতেন সাধারণ মুসল্লিরা। তিন সম্প্রদায়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় প্রতিবছরই রমজান মাসে আল-আকসা ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়।
পবিত্র আল-আকসা মসজিদ বা বায়তুল মুকাদ্দাস সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান বলে বিবেচিত। তবে জেরুজালেমের এই জায়গাটিকে পবিত্র স্থান হিসেবে দাবি করে আসছে ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও। ইহুদিদের কাছে এটি টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত। ইতিহাসবিদদের মতে, বছরের পর বছর চলতে থাকা ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে এই পবিত্র মসজিদ।
পবিত্র আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের প্রথম কেবলা হিসেবে পরিচিত। কাবার পর ইসলামে দ্বিতীয় উপাসনাস্থল ছিল এটি। ঐতিহাসিকভাবেই আল-আকসা মুসলমানদের পবিত্র স্থান। তারপরও ইউনেস্কো এটিকে মুসলমানদের পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে, ইহুদি ও খ্রিস্টানরাও আল-আকসা মসজিদকে তাদের পবিত্র ভূমি হিসেবে দাবি করে আসছে।
এটি ইহুদিদের কাছে পবিত্র ভূমিখ্যাত ‘টেম্পল মাউন্ট’ বা ‘ঈশ্বরের ঘর’। টেম্পল মাউন্টকে ঘিরে থাকা ‘ওয়েস্টার্ন ওয়াল’ ইহুদিদের কাছে ‘পৃথিবীর ভিত্তিপ্রস্তর’ হিসেবে স্বীকৃত। ইহুদিদের দাবি, পবিত্র এই ভূমির নিচেই রয়েছে তাদের দুটি প্রাচীন মন্দির। এখানে নিয়মিত প্রার্থনায় অংশ নেয় লাখো ইহুদি। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছেও পবিত্রতার দিক থেকে সমান গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গা। তাদের বিশ্বাস, এখানেই ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়েছিল যিশুকে। তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর শহর জেরুজালেম।
আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর আল-আকসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরাইল। এমনকি ১৯৬৯ সালে পবিত্র মসজিদটিতে দখলদাররা অগ্নিসংযোগ করেছিল বলেও জানা যায়। এরপর নানা বিধিনিষেধ আর শর্ত পূরণের মাধ্যমে সেখানে ইবাদতের সুযোগ পেতেন সাধারণ মুসল্লিরা। এরপরও কয়েকবার বিভিন্ন অজুহাতে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী আল-আকসা মসজিদ ফিলিস্তিনিদের জন্য বন্ধ করে দেয়।
২০০৩ সালে জেরুজালেমে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের আল-আকসায় প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরাইল। এরপর থেকে সংকট আরও গভীর হতে থাকে। বিভিন্ন সময় ইহুদিরা মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে নিরীহ মুসল্লিদের ওপর হামলা চালানো শুরু করে।
১৯৬৭ সালে ইসরাইল পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকাসহ পুরোনো শহর পূর্ব জেরুজালেম দখল করার পর এই অঞ্চলে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ এক খণ্ড ভূমিতে পরিণত হয়েছে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ। যদিও ইসরাইল সৃষ্টির বহু আগে থেকেই জেরুজালেম নিয়ে সংঘাত চলছে। এর শেষ কোথায়–তার উত্তর কারও জানা নেই।
No comments