সৌদি রাজপরিবার কিভাবে এতো ক্ষমতাধর হয়েছে? The Powerful Saudi Royal Family
ধনীদের সম্পদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের জানার আগ্রহ অনেক। বর্তমান পৃথিবীতে ক্ষমতাধর পরিবারের মধ্য Saudi Royal Family একটি। আপনারা হয়ত অনেকেই জানেন, সৌদি আরবই পৃথিবীর একমাএ দেশ যার নামকরণ করা হয়েছে একটি পরিবারের নামে। অন্য কোনো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এই সৌদ পরিবার কিন্তু শুরু থেকেই এত ক্ষমতাবান কিংবা বিত্তশালী ছিল না। মরুভূমির নিতান্তই সাধারণ বেদুইন গোত্রদের মতোই ছিল এরা। সৌদ পরিবারের পূর্বপুরুষরা হয়ত ভাবতেও পারেননি তাদের নামেই একদিন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র সৌদি আরব গঠিত হবে।
কীভাবে দরিদ্র মরুচারী থেকে পৃথিবীর ধনীতম রাষ্ট্রগুলোর একটি হয়ে উঠলো আজকের সৌদি আরব? এর পেছনে কতটুকু অবদান তরল সোনা নামে খ্যাত তেলের। কতটুকুই বা ইসলামের?
Tazza Trendz Blog এর আজকের এই পর্বে এই সকল তথ্যের অজানা গল্পটিই আজকে আমরা জানব।
এবার শুরু থেকেই বলা যাক। তাও প্রায় ৬০০ বছর পূর্বের কথা। হেজাজ আর নাজদের মরুর বুকে যখন বেদুইনদের প্রতাপ। তখনো আল মুরাইদি নামের এক লোক ভাবতেও পারেনি একদিন তারই কোনো বংশধরের হাত ধরে এ এলাকা হয়ে উঠবে একটি রাষ্ট্র। যে দেশের নাম কিনা আবার তারই পরিবারের নামে!
ইবনে রাবিয়া আল মুরাইদি। তিনিই সৌদ পরিবারের প্রবীনতম পূর্বপুরুষ, যার সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় ইতিহাসের পাতায়। তাদের নিজস্ব বংশতালিকা অনুযায়ী, ইসমাইল (আ.) এর বংশধর আদনান-এর মাধ্যমে যে বংশগুলো গড়ে ওঠে, তাদেরই একটি ছিল বনু বকর ইবনে ওয়াইল বংশ। এদের বনু হানিফা বংশের সদস্য ছিলেন মানী’ ইবনে রাবিয়া আল মুরাইদি।
মুরাইদি থাকতেন পূর্ব আরব তীরের কাতিফ নামক শহরের পার্শ্ববর্তী এক গ্রামে। গ্রামটির নাম ছিল আল-দুরু। তার গোত্রের নাম ম্রুদাহ। তখন ১৪৪৬-১৪৪৭ সাল। তার এক আত্মীয় ইবনে দীর তাকে আমন্ত্রণ জানান তার কাছে গিয়ে থাকতে। ইবনে দীর ছিলেন তখন অনেকগুলো গ্রাম আর ভূসম্পত্তির (এস্টেট) মালিক বা শাসক। তার শসন করা সেই অঞ্চলটাই আজকের রিয়াদ।
যখন মানী’ সেখানে পৌঁছালেন, ইবনে দীর তাকে মুলায়বিদ ও গুসায়বা নামের দুটো প্রধান এস্টেটের দায়িত্ব দিয়ে দেন। কাতিফ থেকে তখন পরিবার পরিজনদের নিয়ে আসেন মানী’। ইবনে দীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি এ অঞ্চলের নাম দিলেন ‘আল-দীরিয়া’। আজকের দিনে, রিয়াদ প্রদেশের জায়গা দীরিয়া, রাজধানী রিয়াদের উত্তর-পশ্চিম কোণে শহরের পাশেই এর অবস্থান।
দীরিয়ার ধ্বংসাবশেষ। এখানেই বাস করতো তখনকার সৌদ পরিবার
The Powerful Saudi Royal Family
চলুন এবার সে সময়কার হেজাজ আর নাজদ বলতে কোন অঞ্চল বোঝাত সেটা জেনে নেই। হেজাজ হলো- আজকের সৌদি আরবের পশ্চিম দিকের অঞ্চলটা। মক্কা, মদিনা, জেদ্দা কিংবা তায়েফ এ অঞ্চলেরই অন্তর্ভুক্ত। এটি পশ্চিম প্রদেশ নামেও পরিচিত। অন্যদিকে বর্তমান সৌদি আরবের মধ্যাঞ্চল হলো নাজদ। দেশের এক-তৃতীয়াংশ জনগণ এখানেই বাস করে। কাসিম, রিয়াদ, হাইল অঞ্চল নাজদ প্রদেশের অন্তর্গত ছিল।
সে সময় নাজদ প্রদেশের আশপাশে অন্য কোনো দেশ ছিল না। ফলে বিদেশি আগ্রাসনের মুখে পড়েনি অঞ্চলটি। ফলে মানী’ ইবনে রাবিয়া আল মুরাইদির ম্রুদাহ গোত্র নির্বঘ্নে দীরিয়া শাসন করতে লাগলো। ক্রমেই সেটি নাজদের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জনবসতি হয়ে উঠল। ওয়াদি (উপত্যকা) হানিফার তীর জুড়ে গড়ে উঠল মুরাইদির শাসিত অঞ্চল।
যদিও সে সময় মুরাইদির পরিবার তিনটি শাখায় ভাগ হয়ে যায়। এক ভাগ চলে গেল রিয়াদ থেকে ৭৩.৪ কিমি উত্তর-পশ্চিমে দুরমা নামক এলাকায়। আর আলওয়াতবান নামের আরেক শাখা চলে যায় দক্ষিণ ইরাকের যুবায়ের শহরে। বাকি থাকে ওই পরিবারের আল মিগ্রিন শাখা। আল মিগ্রিনরা শাসন করে চলল দীরিয়া। পৌনে দু’শ বছর এভাবেই চলে গেল।
বনু হানিফা গোত্রের সৌদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে মুকরিন ১৭২০ সাল থেকে ১৭২৫ সাল পর্যন্ত দীরিয়ার নেতা ছিলেন। তার পরিবারের নাম ছিল আল মুকরিন। ১৭২৫ সালে তিনি মারা যান। তার নাম থেকেই এ পরিবারের নাম দাঁড়ায় ‘সাউদ’ বা ‘সৌদ’ পরিবার - আল সৌদ। আর ওই পরিবারে নাম থেকেই সৃষ্টি হলো একটি রাষ্ট্র। যা আজকের সৌদি আরব। তবে বর্তমান নামের আগে আল মুকরিন বলেই পরিচিত ছিল রাষ্ট্রটি।
এরপর দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন তুর্কি বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন সউদ। অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রাণান্ত লড়াই করে তিনি পুনরায় আরব ভূখণ্ডে আরবীয়দের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনেন। ১৮১৮ সালে দীরিয়ায় প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের পতন হলে নিহত আবদুল্লাহর ‘তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ’ নামে এক ছেলে মরু অঞ্চলে পালিয়ে যান এবং বনু তামিম গোত্রে আশ্রয় নেন। পরে ১৮২১ সালে তিনি আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসে উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
তুর্কি বিন আবদুল্লাহ ১৮২৪ সালে উসমানিয়াদের নিয়োজিত মিসরীয় শাসকদের হটিয়ে আবার দীরিয়া এবং সঙ্গে রিয়াদ দখল করে নেন। রিয়াদকে রাজধানী করে ‘নজদ আমিরাত’ নামে ইতিহাসের দ্বিতীয় সৌদি রাজ্য গঠন করেন তিনি। দ্বিতীয় সৌদি রাজ্যের আয়তন আগের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। কিন্তু সেটিও বেশি দিন প্রতিষ্ঠিত ছিলও না। ১৮৩৪ সালে তুর্কি বিন আবদুল্লাহকে তার এক জ্ঞাতি ভাই মুশারি বিন আবদুর রহমান বিদ্রোহ করে হত্যা করেন। কিছুদিন মুশারি ক্ষমতায় থাকলেও পরে তাকে হত্যা করা হয় এবং তুর্কির ছেলে ফয়সাল নজদ আমিরাতের ইমাম নিযুক্ত হন।
কিন্তু ১৮৯১ সালে মুলায়দার যুদ্ধে উসমানিয়াদের অনুগত রাশিদি বাহিনীর হাতে দ্বিতীয় সৌদি আমিরাতের পতন ঘটে। ক্ষমতা চলে যায় উসমানি শাসক মুহাম্মাদ বিন রশিদের হাতে। ফলে তৎকালীন সৌদিদের শেষ উত্তরসূরি আবদুর রহমান বিন ফয়সাল তার সহচরদের নিয়ে পালিয়ে যান। বিস্মৃত উষর বালুকাময় ‘রুব আল খালি’ মরুভূমি পাড়ি দিয়ে আবদুর রহমান তার ছেলে আবদুল আজিজকে নিয়ে দক্ষিণ-পূর্বের মুররা নামক বেদুইন গোত্রে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
কিন্তু শীঘ্রই কুয়েতি আমির মুবারাক আল সাবাহের অতিথি হিসেবে তিনি কুয়েতে আশ্রিত হন। ১৯০২ সালে তার পুত্র আব্দুল আজিজ রিয়াদে সৌদি শাসন ফিরিয়ে আনার মিশনে নামেন। তিনি রিয়াদের মাস্মাক দুর্গ দখল করে সেখানের গভর্নরকে হত্যা করেন। তখন মাত্র ২০ বছর বয়সে রিয়াদের শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন আব্দুল আজিজ। সৌদ পরিবারের নতুন নেতা হিসেবে তার পরিচয় তখন থেকে হয় ‘ইবনে সৌদ’। পরের তিন দশক তিনি নাজদ থেকে শুরু করে আশপাশের অঞ্চলে সৌদি সাম্রাজ্যে প্রভাব বিস্তৃত করতে শুরু করেন।
তার প্রধান শত্রুরা ছিলেন হাইলের আল রশিদ গোত্র, হেজাজের মক্কার শরিফগণ এবং আল হাসা-র অটোম্যান তুর্কিরা। আবার, প্রয়াত চাচা সৌদ ইবনে ফয়সালের বংশধরদের সাথেও তার লেগে যায়, কারণ তারাও সিংহাসন দাবি করে। আল রশিদরা পায় অটোম্যানদের সমর্থন। তাই আগে অটোম্যান খেলাফতের সমর্থনে থেকে নিজে ‘পাশা’ উপাধি নিলেও পরে তিনি ব্রিটিশদের সঙ্গে মিত্রতা করেন আল রশিদের বিরোধিতা করতে।
১৯১৫ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ইবনে সৌদের অধিকৃত অঞ্চলের নিরাপত্তা দেয় ডারিন চুক্তি অনুযায়ী। ১৯২১ সালে ইবনে রশিদদের পরাজিত করেন ইবনে সৌদ। তিনি তার নতুন অধিকৃত অঞ্চলের নাম দেন নাজদ সালতানাত। ১৯২৬ সালে তিনি হেজাজ জয় করেন। এর কয়েক মাস পর শেষ হয় ব্রিটিশ নিরাপত্তা। পরের পাঁচ বছর তিনি কিংডম অফ হেজাজ এবং কিংডম অফ নাজদ এই দুই রাজ্য পরিচালনা করেন। ১৯৩২ সালের মাঝে সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দেন ইবনে সৌদ। সে বছর তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন কিংডম অফ সৌদি অ্যারাবিয়া, যা আজকের সৌদি আরব। (সৌদি রাজপরিবার কিভাবে এতো ক্ষমতাধর হয়েছে? The Powerful Saudi Royal Family)
তারপর,
১৯৩৭ সালে দাম্মামের কাছে আবিষ্কৃত হয় তেলের বিশাল রিজার্ভ। আর তেলের কারণে অর্থনৈতিক মোড় ঘুরে যায় সৌদ পরিবারের। ১৯৪৫ সালে আমেরিকার সঙ্গে মিত্রতা করেন তিনি। ১৯৫৩ সালে ইবন সৌদ মারা যান। তিনি আজ সৌদি আরবের ‘প্রতিষ্ঠাতা’ নামে পরিচিত। তার সরাসরি বংশধরগণ ‘হিজ/হার রয়াল হাইনেস’ উপাধি পান। ১৯৯৯ সালে (হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে) সৌদি আরবের শতবর্ষ পালিত হয়, কারণ ১৯০২ সালে তিনি রিয়াদ অধিকার করেছিলেন।
তার মৃত্যুর পর পুত্র সৌদ বিন আব্দুল আজিজ সিংহাসনে আরোহণ করেন কোনো ঘটনা ছাড়াই। কিন্তু তার বিলাসবহুল জীবনের কারণে ক্রাউন প্রিন্স ফয়সালের সাথে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ১৯৬৪ সালে গ্র্যান্ড মুফতির নির্দেশে তাকে সিংহাসন ছেড়ে দিতে হয় ফয়সালের কাছে। এ সময় ইবনে সৌদের কয়েক পুত্র মিসর চলে যান, তারা নিজেদের ‘ফ্রি প্রিন্স’ ডাকতেন। যেমন, তালাল ইবনে আব্দুল আজিজ। পরে অবশ্য তাদের ফিরিয়ে আনেন ফয়সাল এবং রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করেন।
১৯৭৫ সালে ভাগ্নের হাতে তিনি নিহত হন। ভাগ্নের নাম ছিল ফয়সাল ইবনে মুসাইদ, তাকে সাথে সাথেই মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মেরে ফেলা হয়। পরের রাজা হবার কথা ছিল প্রিন্স মুহাম্মাদের, কিন্তু তিনি আপন ভাই প্রিন্স খালিদকে সিংহাসন দিয়ে দেন। ১৯৮২ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কিং খালিদ, এরপর ফাহাদ রাজা হন। কিং ফাহাদ ছিলেন শক্তিশালী ‘সুদাইরি সেভেন’ এর সবচেয়ে বড়। এই সাতজন ছিলেন ইবনে সৌদের স্ত্রী হাসসা আল সুদাইরির ছেলে। ১৯৮৬ সালে কিং ফাহাদ ‘হিজ ম্যাজেস্টি’ উপাধি বাদ দিয়ে নতুন উপাধি চালু করলেন- ‘কাস্টোডিয়ান অফ টু হলি মস্কস’বা ‘দুই পবিত্র মসজিদের অভিভাবক’ (মক্কা-মদিনার দুই মসজিদ)।
১৯৯৫ সালে কিং ফাহাদের স্ট্রোক হবার পর তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান। তখন ভারপ্রাপ্ত রাজা হন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। ২০১৫ সালের আগস্টে মারা যান কিং ফাহাদ, সেদিন রাজা হন কিং আব্দুল্লাহ। তিনি সাথে সাথেই ছোট ভাই সুলতান বিন আব্দুল আজিজকে ডিফেন্স মিনিস্টার এবং ‘সেকেন্ড ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার’ করেন, অর্থাৎ পরবর্তী রাজা তিনিই হবেন।
কিন্তু, ২০০৯ সালের ২৭ মার্চ তিনি ইন্টেরিয়র মিনিস্টার প্রিন্স নায়েফকে ‘সেকেন্ড ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার’ বলে ঘোষণা দেন, এবং ২৭ অক্টোবর তাকে ক্রাউন প্রিন্স করেন। সুলতান মারা যান ২০১১ সালের অক্টোবরে নিউ ইয়র্কে। আর, প্রিন্স নায়েফ মারা যান ২০১২ সালের ১৫ জুন জেনেভাতে। ক্রাউন প্রিন্স তখন হলেন সালমান।
দীর্ঘকাল অসুখে ভোগার পর নয় বছর শাসন শেষে ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি নিউমোনিয়ায় মারা যান কিং আব্দুল্লাহ। ভাই ও ক্রাউন প্রিন্স সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ তখন হন নতুন রাজা।
২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল তিনি মুহাম্মাদ বিন নায়েফ আল সৌদকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ঘোষণা দেন। তিনি ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হিসেবে কাজ করেছেন, এ ছাড়াও সৌদি আরবের ইন্টেরিয়র মিনিস্টার ছিলেন, একইসাথে তিনি আব্দুল আজিজের প্রপৌত্র। কিন্তু ২০১৭ সালের ২১ জুন তাকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং তার ক্রাউন প্রিন্স উপাধিও কেড়ে নেন কিং সালমান।
এরপর দৃশ্যপটে নতুন রূপে এলেন মুহাম্মাদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। তাকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন কিং সালমান। একইসাথে তিনি এখন সৌদি আরবের ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার। বলা হয়েছে, তিনিই আসলে বাবা কিং সালমানের রাজক্ষমতার পেছনে আছেন মূল কারিগর হিসেবে। বর্তমান রাজার মৃত্যুর পর তিনিই হবেন সৌদি আরবের রাজা। তার স্ত্রীর নাম সারা বিনতে মাশরুর।
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে সৌদির মূল আয় ছিল ইসলাম কেন্দ্রীক। তাদের প্রধান উপার্জন ছিল হজ থেকে আয়। বিশের দশকে প্রতি বছর এক লাখ লোক হজ করতে যেতেন। কিন্তু ১৯৩৮ সালে যখন তেলখনি আবিষ্কৃত হলো তখন আব্দুল আজিজের সাম্রাজ্য বিস্তার নতুন উদ্যম পেল।
১৯৩৯ এর শেষ দিক থেকে সৌদি আরব তেল রপ্তানি শুরু করল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেশিরভাগ তেল মিত্রবাহিনীর কাছে বিক্রি করা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৩ সালের মাঝে তেল থেকে উপার্জন ৭ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। তখন থেকে সৌদি আরবের মূল আয় হলো এই তেল রপ্তানি।
সৌদি আরবজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানান ঐতিহাসিক স্থাপনা ও স্থানকে নতুন করে সাজিয়ে তুলছেন প্রিন্স। মূলত তেল রপ্তানিমুখী অর্থনীতি থেকে সরে আসতেই পর্যটনের ওপর জোর দিয়েছেন যুবরাজ। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধনে সবুজায়নেও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
এই রাষ্ট্রের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় রয়েছে সেই সৌদ পরিবারের সদস্যরাই। বর্তমানে সৌদ পরিবার হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানে থাকা ধনী পরিবার। পাশাপাশি অন্যতম ক্ষমতাধর পরিবারও বটে।
আল সৌদ তিনটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এগুলো যথাক্রমে প্রথম সৌদি রাষ্ট্র, দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র ও আধুনিক সৌদি আরব। প্রথম সৌদি রাষ্ট্রকে ওয়াহাবিবাদের বিস্তার হিসেবে ধরা হয়। দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের কারণে চিহ্নিত হয়। আধুনিক সৌদি আরব মধ্য প্রাচ্যে প্রভাবশালী।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে মিত্র শক্তির আগ্রাসন ও আরব জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহের কারনে উসমানীয় খেলাফতের পতন হয়।বৃটেন ও ফ্রান্সের মত বড় ঔপোনিবেশিক শক্তিগুলো মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে ছোট ছোট জাতিগোষ্ঠে পরিনত করে।মধ্যপ্রাচ্যে বৃটেন তার আধিপত্য বিস্তার করতে পুতুল সরকার গঠন করে।বর্তমানের সৌদি রাজ বংশ এর মধ্যে অন্যতম।অটোমান সাম্রাজ্য পতনের অন্যতম কারণ হলো আরব বিদ্রোহ।আটোমানদের দুর্বলতার সুযোগে বৃটেনের সহয়তায় আরব গোত্রপতিরা আটোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
১৯১৬ সালে সংযুক্ত আরব রাষ্ট্র গঠন করার উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীর শাসক শরিফ হোসাইন বিন আলি বৃটেনের সহযোগীতায় উসমানীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুচনা করে।যদিও ১৯১৬-১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলা এই বিদ্রোহ উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ফলে আরব ভূখন্ডে আটোমানদের আধিপত্যের অবসান ঘট।১৯০২ সালে সৌদ বংশের প্রতিষ্ঠাতা ‘আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদ’ রিয়াদ দখল করে।তখনও আরব উপদ্বীপ আটোমানদের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিলো।
১৯১২ সালে আটোমানদের কাছে থেকে ইবনে সৌদ আরব উপদ্বীপ দখল করে নেয়। তিনি বিভিন্ন সময় বৃটেনের কাছ থেকে সৈন্য এবং অর্থ সহয়তা লাভ করেন।১৯২৬ সালে সৌদের বাহিনী হেজাজ দখল করে এবং সৌদ নিজেকে হেজাজের রাজা ঘোষনা করে।আরব উপদ্বীপে সৌদ তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার উদ্দেশে বিভিন্ন প্রভাবশালী গোত্রে বাইশটি বিবাহ করেন। অবশেষে ১৯৩২ সালে হেজাজ ও নজদ আঞ্চল একত্রিত করে সৌদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩২ সালে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরে সৌদি আরব ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ।সৌদি আরব তখন কৃষি এবং হ্বজ থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের উপর নির্ভরশীল ছিলো।
১৯৩৮ সালে সৌদি অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।পারস্যে উপসাগরীয় অঞ্চলে তেল আবিষ্কারের পর সৌদিআরব রাতারাতি ধনী রাষ্ট্রে পরিনত হয়ে যায়।তেল উত্তলনের জন্য ইবনে সৌদ বৃটিশদের চেয়ে আমেরিকাকে বেশি প্রাধন্য দেয়।১৯৩৮ সালে ইবনে সৌদ ক্যালিফর্নিয়া ওয়েল কোম্পানীর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।একই বছর সৌদি আরবে বানিজ্যিক ভাবে তেল উত্তলন শুরু হয়।সৌদি আরব মূলত দুটি পরিবার নিয়ন্ত্রন করে। ইবনে সৌদের পরিবার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয় এবং আব্দুল ওহাবের উত্তরসূরীরা ধর্মীয় এবং আইনগত সিদ্ধান্ত প্রদান করে।
বর্তমানে সৌদি আরবের রাজপরিবার সম্পদের বাজারমূল্য ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। পুরো সৌদি আরব রাষ্ট্রটিই আল সৌদ পরিবারের অঢেল সম্পত্তি ও আয়ের উৎস, যেটিকে তারা মনে করে ‘পরিবার নিয়ন্ত্রিত পারিবারিক সম্পত্তি’! তেলের খনি, মূল্যবান জায়গা, বড় বড় ব্যবসায়িক চুক্তি থেকে শুরু করে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সবকিছু থেকেই আয় করে এই সৌদি রাজপরিবার।
Blog টি সম্পর্কে আপনার মতামত জানান, এবং Blog টি ভালো লাগলে একটি লাইক দিবেন। আজকে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তী সময়ে আরো একটি নতুন Blog নিয়ে চলে আসব আপনাদের মাঝে। ততক্ষণ পযর্ন্ত আল্লাহ্ সবাইকে সুস্থ রাখুক,ভালো রাখুক।
Follow us: Facebook
No comments