Header Ads

Header ADS

কিভাবে মার্কিন ডলার বিশ্বজুড়ে আধিপত্য স্থাপন করেছিল | How To The US Dollar Became Dominate In The World?

 


ডলার - এ নামটি শুনলেই বর্তমানে সারা বিশ্ববাসীর সামনে যে ছবি ভেসে উঠে তা হলো আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মুদ্রা মার্কিন ডলার। সারা বিশ্ব শুধু আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মুদ্রার নামই ডলার নয় । দুনিয়ার অনেক দেশের মুদ্রার নামই ডলার। যেমন - (Australian Dollar) ,(New Zealand Dollar) , (Canadian Dollar),(Singapore Dollar) , (Hong Kong Dollar) সহ অনেক দেশের মুদ্রার নাম ডলার হলেও সারা বিশ্বে প্রায় সবাই ডলার বলতে মূলতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারকেই বোঝে ও জেনে থাকে।কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক রিজার্ভ কারেন্সি বা রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলার একচেটিয়া রাজত্ব করছে সারা বিশ্বে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনার লগ্নে সারা পৃথিবীতে আর্থিক অস্থিরতা তৈরি হয়। যদিও আমেরিকান অর্থনীতি ব্রিটিশ অর্থনীতিকে ছাপিয়ে গিয়েছিল তবুও গোটা বিশ্ববাণিজ্যের কেন্দ্র তখনও ইংল্যান্ড ছিল এবং এই বাণিজ্যের বেশিরভাগই ব্রিটিশ পাউন্ডে হত। এই অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বেশিরভাগ দেশই তাদের কারেন্সিকে সোনার সাথে Exchange করতে থাকে অর্থনীতিতে স্থায়ীত্ত্ব আনার জন্য।




কিভাবে মার্কিন ডলার বিশ্বজুড়ে আধিপত্য করেছিল


১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অনেক দেশ তাদের সামরিক খরচ মেটানোর জন্য গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ছেড়ে পেপার মানিতে লেনদেন শুরু করে। ব্রিটেন কিন্তু গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ধরে রেখেছিল, কারণ তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ পাউন্ডকে বিশ্বের এক নম্বর কারেন্সি হিসেবে বজায় রাখা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার তিন বছরের মধ্যে ব্রিটেন টাকা ধার করার মতো পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছায়। সে সময় একটা স্থিতিশীল ও শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে আমেরিকাই টাকা ধার নেওয়ার একটা নির্ভরযোগ্য উৎস ছিল, ডলার নির্ভর আমেরিকান bond কেনার ধুম পড়ে যায়। ১৯১৯ সালে অবশেষে ব্রিটেন‌ তাঁর গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড পরিহার করে, ফলে যেসব আন্তর্জাতিক ব্যাবসায়ী তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হিসেব ব্রিটিশ পাউন্ডে রাখত তাঁদের জোর ধাক্বা লাগে। তখন‌ কিন্তু world's leading reserve হিসেবে ডলার পাউন্ডকে ছাপিয়ে গেছে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতোই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও আমেরিকা অনেক পরে অংশ নেয়। 

যুদ্ধের প্রথম প্রায় আড়াই বছর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে, এবং যুদ্ধরত রাষ্ট্রগুলোর কাছে প্রচুর পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম ও রসদপত্র বিক্রি করতে থাকে। যথারীতি এসময়ও যুক্তরাষ্ট্র তার রপ্তানিকৃত দ্রব্যাদির বিনিময়ে gold ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, এবং এই নীতির ফলে তাদের স্বর্ণমজুদ ফুলে ফেঁপে ওঠে। ১৯৪৭ সালে বিশ্বের মোট মজুদকৃত স্বর্ণের ৭০% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তগত ছিল। তবে আপনাদের একটি কথা জানিয়ে দেই, সে সময় ধনী রাষ্ট্রগুলোর মধ‍্য আমেরিকাই ছিল একমাএ দেশ যেখানে যুদ্ধের কোনো আছড়ঁ লাগেনি।

আবার,  এই সময় বিশ্বের দেশগুলি পুনরায় গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডে ফিরে আসতে বাধ্য হয়, দেশগুলির কাছে সোনার ভান্ডার ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিলো এই যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে।


ডলারের উত্তরনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় এটি। ১৯৪৪ সালে বিশ্বের ৪৪ টি দেশের প্রতিনিধিরা নিউ Hampshire ব্রেটন উডে সন্মিলিত হয়। এই সন্মেলনের উদ্দেশ্যে ছিল এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করা যেখানে Forex Reserve এমনভাবে maintain করা হবে, যাতে কোনো দেশই disadvantaged position এ না থাকে। এই সন্মেলনের শেষে সিন্ধান্ত হয় যে বিশ্বের currency গুলিকে gold এর সাথে না তৌল করে ডলারে তৌল করা হবে। ঠিক হয় বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি তাদের কারেন্সি ও ডলারের মধ্যে একটা স্থায়ী এক্সচেঞ্জ রেট maintain  করবে। এক কথায়, সেখান থেকেই  শুরু ডলারের আধিপত্য। 



মার্কিন ডলার বিশ্বজুড়ে আধিপত্য স্থাপন


পরিবর্তে আমেরিকা প্রয়োজনে gold এর বদলে ডলার দেবে। কখনো যদি কোনো দেশের কারেন্সি value ডলারের তুলনায় খুব সবল বা দুর্বল হয়ে পরে তখন সেই দেশ কারেন্সি ক্রয় করে বা বিক্রি করে money supply regulate করতে পারবে।

এই ব্যবস্থাটি 'ব্রেটন উডস ব্যবস্থা' হিসেবে পরিচিতি অর্জন করে।


ব্রেটন উডস অ্যারেঞ্জমেন্টের পর ডলার Officially বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে দেখা দেয়। ডলারের পিছনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোনার ভান্ডারের সাপোর্ট ছিল। এবার একটা নতুন ইস্যু দেখা দিল। দেশগুলি তাঁদের ডলারের ভান্ডার জমা রাখবে কোথায়? দেশগুলি ডলার জমা রাখার জন্য আমেরিকার ট্রেজারি security কিনতে শুরু করলো, আমেরিকার ট্রেজারি একটা নিরাপদ storage হিসেবে credibility পেতে শুরু করেছিল।


ডলারের এই মধুচন্দ্রিমা কিন্তু বেশিদিন চলেনি। ট্রেজারি সিকিউরিটির ক্রমবর্ধমান চাহিদা, ডেফিসিট ফাইন্যান্সিং এর প্রয়োজনীয়তা, চলতে থাকা ভিয়েতনাম যুদ্ধের ফান্ডিং ইত্যাদির প্রয়োজনে মার্কেটে কারেন্সি ফ্রি ফ্লো করতে থাকে আমেরিকান সরকার। এর ফলে ডলারের স্টেবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়, ডলারের ক্রেডিবিলিটি কমে যায়। দেশগুলি ক্রমশ ডলার বেচে পুনরায় সোনা কিনতে থাকে। এই সোনার ডিম্যান্ড এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে রাষ্ট্রপতি নিক্সনের হস্তক্ষেপে ডলারকে সোনার থেকে বিচ্যুত করা হয়। আজকে যে ডলার ও বাকি দেশগুলোর কারেন্সির মধ্যে ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট দেখা যায় তা এই ডলার ও সোনার বিচ্যুতির ফল। যদিও বিশ্বজুড়ে স্ট্যাগফ্লেশনের পরিস্থিতিতে ডলার ভালোই পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল।


পরবর্তীতে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ডলারকে আরো শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেন। তিনি ১৯৭১ সালে ঘোষণা করলেন, স্বর্ণের ওপর ভিত্তি করে ডলারের মূল্য আর নির্ধারিত হবে না। বিশ্বজুড়ে আমেরিকান ডলারের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে এবং চাহিদা বাড়ানোর জন্য ১৯৭৪ সালে সৌদি আরবের সাথে একটি চুক্তি করে আমেরিকা। বিশ্ব বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণকারী একক মুদ্রা হিসেবে ডলারকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং টিকিয়ে রাখার মহৌষধ ছিল ডলারকে পেট্রোডলারে রূপ দিতে পারা। পেট্রোডলার আসলে কোনো ডলার নয়; আবার পেট্রোল নামক দাহ্য পদার্থও নয়। পেট্রোডলার মূলত ডলারের বিনিময়ে পেট্রোল ক্রয়ের চুক্তি যা বাদশা ফয়সাল ও প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মধ্যে ১৯৭৪ সালে করা হয়েছে।



পেট্রোল কেবলমাত্র ডলার দিয়েই কেনাবেচা হবে


এই চুক্তি অনুযায়ী সৌদি আরবকে বাধ্য করা হয়েছে ডলারকে সার্বভৌম বিশ্বমুদ্রা হিসেবে মেনে নিতে। অর্থাৎ পেট্রোল কেবলমাত্র ডলার দিয়েই কেনাবেচা করতে হবে, কোনো দেশীয় মুদ্রা দিয়ে নয়। এর বিনিময়ে আমেরিকা সৌদি বাদশাহকে গ্যারান্টি দেয় যে, যতদিন তারা পেট্রোডলার চুক্তি মেনে চলবে ততদিন সৌদি রাজ পরিবার ক্ষমতায় থাকবে।


সৌদি বাদশাহদের ক্ষমতায় থাকতে আরো একটি শর্ত দেয়, সেটা হলো, ওপেকভুক্ত সব দেশকে রাজি করানো যাতে তারা ডলার ছাড়া অন্য কোন মুদ্রা বা স্বর্ণের বিনিময়ে তেল বিক্রি না করে। উল্লেখ্য, সৌদি ছিল একক সর্বোচ্চ তেল উৎপাদনকারী দেশ। সুতরাং সৌদি আরবের চুক্তির কারণে অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশকেও এই চুক্তি মেনে নিতে হয়েছে। সে মাফিক, ১৯৭৫ সালে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন, অর্থাৎ অন্যান্য দেশগুলো সৌদি আরবের মতোই সিদ্ধান্ত নেয়। তেল হলো একটি পণ্য যা সব দেশের প্রয়োজন এবং আমদানি করতে হয় মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ডলারের মাধ্যমে। ফলে, প্রকারান্তে এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সব ব্যবসায়-বাণিজ্য যেন ডলার ছাড়া অন্য কোনো মুদ্রায় না চলে তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; হয়েছেও তাই। আমেরিকা সবসময়ই নিশ্চিত করতে চেয়েছে যেন কোনো দেশ এই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে না যায়।


এই পেট্রোডলারের পরিবর্তে গাল্ফদেশগুলিকে আমেরিকা সুরক্ষা দেয়, অস্ত্র বিক্রি করে। অর্থাৎ তেল বিক্রি করে পাওয়া ডলার পুনরায় আমেরিকার বাজারেই ইনভেস্ট করা হয়। এই পেট্রোডলার আমেরিকান ডলারের আধিপত্যের একটা বড় কারণ।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী পক্ষকে দমন ও রাজনৈতিক কারণে ডলারকে ক্রমাগত মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারে অনেক দেশ এখন ত্যক্তবিরক্ত। 



ডলার বিশ্বজুড়ে আধিপত্য স্থাপন করেছিল 


ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ছিল বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম রিজার্ভ।

পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেনের যোগাযোগব্যবস্থা সুইফট (SWIFT ) থেকে রাশিয়ার অনেক ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।এ মুহূর্তে প্রায় সম্পূর্ণরূপে রাশিয়া ডলারভিত্তিক আন্তর্জাতিক লেনদেনব্যবস্থা থেকেও বাইরে। এর আগে গত কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক এক বাণিজ্যযুদ্ধ চালিয়েছে ।


যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে আফগানিস্তান থেকে রাশিয়া পর্যন্ত সবার ডলার-রিজার্ভ ইচ্ছেমতো আটকে দিচ্ছে, তাতে মধ্যপন্থী দেশগুলোর ভেতরও ভয় ঢুকেছে। গ্লাজিয়েভের ভাষায়, "ডলার এখন এক বিষাক্ত মুদ্রার নাম"। এ রকম ভীতিকে কাজে লাগিয়েই ডলার আধিপত্যের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়তে চায় চীন - রাশিয়া সহ আরো অনেক দেশ । 


রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পর বিভিন্ন দেশ ডলার নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ডলার বিরোধিতার কারণে দেশগুলোর ওয়াশিংটনের ক্ষোভের মুখে পড়াও আশঙ্কাও করা যায়।


 "ইউয়ানের মাধ্যমে লেনদেনের সম্ভাব্য চুক্তি থেকে ধারণা করা যায়, US ডলারের একটি শক্তিশালী বিকল্প খুঁজছে বিশ্ব।"


ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের জন্য সৃষ্টি হয়েছে অস্বস্তিকর এক মুহূর্তের।

যদি যুক্তরাষ্ট্র অপ্রত্যাশিত কিছু না করে, তাহলে অন্যান্য দেশও ডলারের ওপর ভরসা বজায় রাখবে বলে মনে করা হয়।"ডলার এর আগেও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু তারপরও অন্য কেউ তার জায়গা দখল করতে পারেনি, কেননা যখন অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয় তখন যুক্তরাষ্ট্র স্থিতিশীল থাকে।  আর এভাবেই আধিপত্য বজায় রাখে ডলার।"

আজকের দিনের চিত্রটা কি? গোটা বিশ্বের ৬১% বিদেশী ব্যাংকের রিজার্ভ আমেরিকান ডলারে হিসেব হয়, ৪০% বিশ্বের ঋনের হিসেব ডলারে হয়। প্রচুর ডেফিসিট ফাইন্যান্সিং ও বিশাল ঋন থাকা সত্ত্বেও আমেরিকান অর্থনীতি এখনও এতটাই Stable যে আমেরিকান ট্রেজারিতে ইনভেস্ট করা সবথেকে নিরাপদ ও লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে ধরা হয়।

বর্তমানে সারা দুনিয়াতে নানা কারনে ও ঘটনা প্রবাহে ডলার সবচেয়ে বেশী আলোচিত হচ্ছে  এবং গরীব থেকে ধনী সব মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করছে, এই ডলারের জন্য আমাদের মত গরীব দেশ ও মানুষের যেমন জীবন-যাপন দিনকে দিন  জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে; ঠিক তেমনি তার গরমী থেকে রেহাই পাচ্ছে না উন্নত দেশ ও জাতিও।


Follow us: Facebook
                   Youtube




No comments

Powered by Blogger.