সামরিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ টি মুসলিম দেশ-২০২২; যাদের সামরিক শক্তি দেখে অনেক দেশ ভয়ে থাকে!
Top 10 Most Powerful Muslim Country
একটা সময় ছিল যখন পুরো পৃথিবী মুসলিমরা শাসন করতো। ইসলামি খেলাফত ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১০০ বছর আগে।বর্তমানে দেশগুলো সেই গৌরব হারিয়েছে।
আর এই জন্যেই মুসলিম দেশগুলো বা মুসলমানরা নির্যাতন ও নিপীড়নে স্বীকার হচ্ছে। তবে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে মুসলিম দেশগুলো ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে।তারা নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে।
গত কয়েক বছরের বিশ্বের বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ সামরিক শক্তিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসর, ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান।
তবে এই সামরিক শক্তি প্রতিনিয়তই কোনো কোনো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই বিভিন্ন কারনেই তাল সামলাতে না পেরে পিছিয়ে পড়ছে।
প্রতিবছর বিশ্বের ১৪০ টি সামরিক শক্তিধর দেশের সামরিক শক্তির র্যাংকিং প্রকাশ করে থাকে Global Fire Power. 2022 সালেও তারা নতুন করে সামরিক শক্তির র্যাংকিং প্রকাশ করেছে। Tazza Trendz Blog এর আজকের আয়োজনে আমরা নতুন প্রকাশিত এই 140 টি দেশের মধ্যে প্রথম ১০ টি দেশের সামরিক র্যাংক একনজরে তুলে ধরব।
আমাদের এক নাম্বারে রয়েছে -
১.পাকিস্তান:
সামরিক শক্তিতে আরও এগিয়ে গেল পাকিস্তান। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে দেশটির। সম্প্রতি প্রকাশিত ওই র্যাঙ্কিংয়ে এখন মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরে পাকিস্তান। অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও সামরিক খাতে পাকিস্তানের এই উন্নতি অবাক করার মতো। ক্রমশই সমরাস্ত্র শিল্পে আমদানি নির্ভরতা কমানোর পথেও হাঁটতে শুরু করেছে দেশটি।
মুসলিম বিশ্বের মধ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তান। এজন্য দেশটিকে বলা হয় মুসলিম বিশ্বের সুপার পাওয়ার। সামরিক শক্তির অন্যান্য মানদণ্ডেও দ্রুত উন্নতি করছে দেশটি। আর এই উন্নতির প্রভাব পড়েছে তাদের র্যাঙ্কিংয়ে। সামরিক শক্তি বিষয়ক ওয়েব সাইট গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২১ সালের জন্য প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে বড় লাফ দিয়েছে দেশটি।১৩৩টি দেশ নিয়ে প্রকাশিত ওই র্যাঙ্কিংয়ে ১৫ নম্বর থেকে এক লাফে দশে উঠে এসেছে পাকিস্তান।র্যাঙ্কিংয়ের সেরা ১৫টি দেশের মধ্যে একমাত্র পাকিস্তানের অবস্থানেরই উন্নতি হয়েছে।
মূলত প্রতিবেশী ভারতকে মোকাবেলার জন্যই পাকিস্তান ক্রমশ তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধ করে চলেছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট সত্ত্বেও দেশটি বাজেটের বড় একটি অংশ ব্যয় করে সামরিক খাতে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে পাকিস্তান সামরিক খাতে বরাদ্দ করেছে ৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ছিল আগের অর্থ বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি। তবে সামিরক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের প্রকৃত সামরিক বাজেট এর চেয়েও অনেক বেশি। কারণ এই বাজেটের সাথে তাদের সামরিক সেক্টরে বড় কিছু কেনা-কাটা, পারমাণবিক কর্মসূচির খরচ, আধা সামরিক বাহিনীর খরচ যোগ করা হয়নি।
এছাড়া নতুন গড়ে তোলা একটি সিকিউরিটি ডিভিশনের খরচও এই বাজেটের বাইরে রাখা হয়েছে।লন্ডনভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক এসওএএস এর রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট আয়শা সিদ্দিকা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রশ্নের মুখে না পড়তে পাকিস্তান কিছু খরচ সামরিক বাজেটের সাথে যুক্ত করেনি।এগুলো যোগ করার হলে পাকিস্তানের সামরিক বাজেট দাড়াবে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। এই সামরিক গবেষক গত বছর আলজাজিরা অনলাইনে তার এক নিবন্ধে বলেছিলেন, পাকিস্তান এমন এক সময়ে তার এই প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়ে চলছে যখন, দেশটি করোনা মহামারী ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যস্ত।করোনা মহামারী নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়ন ও শক্তিবৃদ্ধিও ক্ষেত্রে এতটুকু ছাড় দেয়নি। অন্য সব সেক্টর থেকে এ সময় খরচ কমানো হলেও সামরিক বাহিনীর খরচ কমেনি। কাজেই সামরিক শক্তিতে পাকিস্তানের এই উন্নতি যে হুট করেই হয়েেেছ তেমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। দেশটির কর্মকর্তারা অনেক দিন ধরেই এই সেক্টরে উন্নতির দিকে নজর দিয়েছেন। যার কারণে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মাঝেও পাকিস্তান প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করে চলেছে তার সামরিক বাজেট।
প্রতিরক্ষা সেক্টরে পাকিস্তান গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর চীন ও তুরস্কের সহযোগিতার হাত আরো লম্বা হয়েছে পাকিস্তানের দিকে।গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য মতে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর মোট জনবল ১২ লক্ষ চার হাজার। এর মধ্যে সক্রিয় সদস্য ৬ লক্ষ্য ৫৪ হাজার, আর রিজার্ভ সদস্য আছে সাড়ে ৫ লক্ষ। এর বাইরেও রয়েছে ৫ লক্ষ্য সদস্যের একটি আধা সামরিক বাহিনী। পাকিস্তানের স্থল বাহিনী আকারের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী ছাড়াও দেশটির রয়েছে স্ট্রাটেজিক প্লানস ডিভিশন ফোর্স নামের একটি বাহিনী। অত্যন্ত ক্ষমতাবান এই বাহিনী পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ও স্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত।১৭০টির মতো পারমাণবিক অস্ত্র ও এগুলো নিক্ষেপের জন্য বিভিন্ন মিসাইল ও প্রজেক্টাইলের দেখভাল করে এই এলিট ফোর্স।আর রয়েছে আধাসামরিক বাহিনীর একাধিক ডিভিশন।
পাকিস্তানের স্থল বাহিনীর যুদ্ধ সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ৬৮০টি ট্যাংক, ৯ হাজার ৬৩৫টি সাজোয়া যান, ৪২৯টি সেল্ফ প্রোপেল্ড আর্টিলারি বা ভ্রাম্যমান কামান, টাউড আর্টিলারি বা অন্য যানবাহনের ওপর স্থাপনযোগ্য কামান সংখ্যা ১ হাজার ৬৯০টি। এছাড়া রকেট প্রজেক্টর রয়েছে ৩৩০টি।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মোট এয়ারক্রাফট সংখ্যা ১ হাজার ৩৬৪টি। এর মধ্যে ফাইটার ৩৫৭টি, স্পেশাল মিশন এয়ারক্রাফট ২৪টি, প্রশিক্ষণ বিমান ৫১০টি এবং অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৫৩টি। পাকিস্তানের তিনটি বাহিনীর মধ্যে তার বিমান বাহিনীকেই সবচেয়ে শক্তিশালী ও দক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সব মিলে গত কয়েক বছরে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সেক্টরে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। নিজস্ব ব্যবহারের বাইরে স্থল যুদ্ধের কিছু উপকরণ তারা রফতানিও করছে। তাছাড়া পাকিস্তানের রয়েছে শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিশ্বব্যাপী পাকিস্তানের এই গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ নামে পরিচিত। পাকিস্তানি অস্ত্র ভাণ্ডারের প্রায় ৮০ শতাংশ চীন থেকে আমদানি করা হয়। একসময় আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো থেকেও বিপুল অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করত পাকিস্তান।
সামরিক খাতে পাকিস্তানের এসব পদক্ষেপই তাদের সামরিক শক্তির র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশে জায়গা করে নিতে সহযোগিতা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
2.তুরস্ক:
সামরিক সক্ষমতায় পাকিস্তানের পরই রয়েছে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ তুরস্ক।
বিপুল সামরিক শক্তি গড়ে তুলছে তুরস্ক।
তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকর সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, তুর্কি ও মার্কিন কর্মকর্তারা এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নিয়ে ওয়াশিংটনে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আকর সতর্কতার সাথে আশাবাদী যে, এর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া যেতে পারে। তুরস্ক এফ-৩৫ প্রোগ্রামের অংশীদার ছিল এবং শতাধিক এফ-৩৫ জেট কেনার পরিকল্পনা করেছিল। এস-৪০০ কেনার ব্যাপারে রাশিয়ার সাথে সমঝোতার পর তুরস্ক এফ-৩৫ প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়ে এবং এর প্রতিরক্ষা শিল্প অধিদফতর ২০২০ সাল থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছে। তবে, তুর্কি ঠিকাদাররা এখনো পঞ্চম প্রজন্মের জেটের যন্ত্রাংশ তৈরি করছে। অন্যদিকে, এরদোগান তুরস্কের বিদ্যমান নৌবহরকে আপগ্রেড করার জন্য ৪০টি নতুন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং প্রায় ৮০টি আধুনিকীকরণ কিট কেনার জন্য গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রস্তাব করে।
তুর্কি সামরিক বাহিনীর বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজার। আর রিজার্ভ সদস্য রয়েছে আরও এক লাখ ৭৮ হাজার ৭০০ জন। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা এক লাখ ৫২ হাজার। সব মিলিয়ে দেশটির বর্তমান সামরিক জনশক্তি ৭ লাখেরও বেশি।তুরস্কের সেনাবাহিনীর রয়েছে নিজস্ব বিমান, নৌ ও পুলিশিং ইউনিট। দেশটির সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ট্যাংক তিন হাজার ৭৭৮টি, আর্মারড ফাইটিং ভেহিকেল (এএফভি) সাত হাজার ৫৫০টি, স্বচালিত কামান (এসপিজি) এক হাজার ১৩টি, ভ্রাম্যমাণ কামান (টিএ) ৬৯৭টি, বহুমুখী রকেট ব্যবস্থা (এমএলআরএস) ৮১১টি। বিমান বাহিনীর অধীনে রয়েছে ৯টি যুদ্ধবিমান ঘাঁটি।
এ ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও ড্রোন ঘাঁটিসহ রয়েছে আরও ১১টি ঘাঁটি ও ৪১টি সোয়াড্রন, বিমানসংখ্যা এক হাজার ৭টি, যুদ্ধবিমান ২০৭টি, প্রশিক্ষণ বিমান ২৭৬টি, হেলিকপ্টার ৪৪৫টি, সামরিক হেলিকপ্টার ৬৪টি। এ ছাড়া তুরস্কের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধবিমানের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ ১৬ ফ্যালকন। তাদের আছে ইসরায়েলের তৈরি মনুষ্যবিহীন ১০টি বিমান আইএআই হিরন।
3.ইরান:
ইরানির প্রভাবশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার ওপর কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা দিয়েছে।
যে কারণে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধে কতটা সক্ষম ইরান? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অবস্থান খুবই শক্ত। তাই সামরিক শক্তিতে শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রকে একহাত নেয়ার ক্ষমতা আছে ইরানের।
ইরানের বর্তমানে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার সক্রিয় সেনাসদস্য রয়েছে। সংরক্ষিত সদস্য রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার জন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কমপক্ষে দেড় লাখ ইসলামিক রিভলিউশানারি গার্ড কর্পস বা আইআরজিসি সেনা মজুদ আছে ইরানের। আইআরজিসি ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সামরিক ফোর্স বলে ধরা হয়।
দেশটির সেনাবাহিনীতে ট্যাংক সংখ্যা এক হাজার ৬৩৪। সাঁজোয়া যানের সংখ্যা দুই হাজার ৩৪৫।
সেনাসদস্যের ব্যবহারের জন্য কামান রয়েছে দুই হাজার ১২৮টি। পাশাপাশি ৫৭০টি সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি (সংক্রিয় কামান) এবং এক হাজার ৯০০টি রকেটচালিত কামান রয়েছে।
এছাড়া দেশটির সামরিক প্রশিক্ষিত জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৬ লাখ ১৯ হাজার ২১৫ জন।ইরানের বিমানবাহিনীতে ৫০৯টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে - ফাইটার বিমান ১৪২টি, অ্যাটাক বিমান ১৬৫টি, হেলিকপ্টার ১২৬টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার ১২টি।
পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য ১০৪টি ও পরিবহনের জন্য ৯৮টি উড়োজাহাজ রয়েছে তাদের। ইরানের নৌবাহিনীতে কোনো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নেই। তাদের ফ্রিগেট রয়েছে ছয়টি, করভেট রয়েছে তিনটি এবং ৩৪টির মতো সাবমেরিন রয়েছে। ইরানের ৮৮টি পেট্রোলবোট ও তিনটি মাইন ওয়্যাফেয়ার রয়েছে।মিসাইল শক্তির দিক দিয়েও পিছিয়ে নেই দেশটি। ইরানের দূরপাল্লার বা স্বল্পপাল্লার শক্তিশালী প্রায় ১ হাজারের বেশি মিসাইল রয়েছে। ইরানের এই মিসাইল শক্তি ইসরায়েলের যে কোনো স্থান ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো স্থানে হামলা করাসহ পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত হামলা করতে সক্ষম।
৪.মিশর:
সামরিকভাবে শক্তিশালী মিসর প্রতিরক্ষা ট্যাংকসহ মাঝারি আকারের অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ করে। যুদ্ধের চেয়ে প্রতিরক্ষা বিষয়ে দেশটির আগ্রহী বেশি। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার র্যাংকিংয়ে সামরিক শক্তিতে মিসরের অবস্থান দশম। মিসরের সশস্ত্র বাহিনী ১৮২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ কোটি। সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা চার লাখ ৫৪ হাজার ২৫০ জন এবং রিজার্ভ সৈন্যের সংখ্যা আট লাখ ৭৫ হাজার জন।মিশরের সামরিকবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত আছে মেইন ব্যাটল ট্যাংক, লাইট ট্যাংক, ট্যাংক ডেস্ট্রয়ার, আরমার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার এবং ইনফেন্ট্রি ফাইটিং ভেহিক্যাল। মিশরের প্রধান যুদ্ধ ট্যাংক আছে চার হাজর ১১০টি, আরমার্ড ফাইটিং ভেহিক্যাল ১৩ হাজার ৯৪৯টি, স্ব-চালিত বন্দুক আছে ৮৮৯টি, টাওয়েড আর্টিলারি দুই হাজার ৩৬০টি, মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম রয়েছে এক হাজার ৪৮১টি। মিশরের বিমানবাহিনী হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহিনী। মিশরের বিমানবাহিনীতে রাশিয়ান, আমেরিকান ও ফ্রেঞ্চসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত। তাদের মোট বিমান সংখ্যা এক হাজার ১৩২টি, ফাইটার ৩৩৭টি, ফিক্সড উইং এটাক ৪২৭টি, পরিবহন বিমান ২৬০টি, প্রশিক্ষণ বিমান ৩৮৪টি, হেলিকপ্টার ২৫৭টি, অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৪৬টি।
মিশরের সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনীও বেশ শক্তিশালী। মিশরের নৌবাহিনীতে ২টি হেলিকপ্টারবাহী যুদ্ধজাহাজ আছে। এ ছাড়াও অত্যাধুনিক ফ্রিগেট রয়েছে। করভেট আছে ২টি,সাবমেরিন ৫টি, কোস্টাল ডিফেন্স ক্রাফট ২২৭টি, মাইন ওয়ারফেয়ার আছে ২৩টি।
৫.মরক্বো:
মরক্কোর প্রায় ৩৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা মুসলিম। দেশটির মাত্র ১ শতাংশ জনগণ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। সামরিক শক্তিতে মুসলিম দেশের মধ্যে মরক্কো রয়েছে বেশ অনেকটাই এগিয়ে। দেশটির আছে একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী। দেশটির সামরিকবাহিনীতে মোট সেনাসদস্যের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ।
সেনাবাহিনীর অধীনে আছে প্রয়োজনীয় ব্যাটেল ট্যাংক, লাইট ট্যাংক এবং যুদ্ধযান। কমব্যাট ট্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ২৭৬টি, আর্মড ফাইটিং যান রয়েছে দুই হাজারের ওপরে, সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি ৪৪৮টি, টোয়েড আর্টিলারি ১৯২টি এবং রকেট প্রজেক্টর রয়েছে ৭২টি।একইভাবে বিমানবাহিনীও অনেক সমৃদ্ধ। তাদের মোট বিমান ২৮৪টি। এর মধ্যে ফাইটার বিমান ৫৬টি, অ্যাটাক বিমান ৫৬টি, ট্রান্সপোর্ট বিমান ১১৬টি, ট্রেইনার বিমান ৮০টি এবং হেলিকপ্টার আছে ১৩০টি। নৌশক্তিতেও পিছিয়ে নেই মরক্কো। তাদের নৌবাহিনীর রয়েছে নিজস্ব হেলিকপ্টারবাহী যুদ্ধজাহাজ। বিশ্বের দরবারে তাদের এই সক্ষমতা যথেষ্ট সম্মানের সাথেই বিবেচনা করা হয়। মরক্কোর রয়েছে নিজস্ব সাবমেরিন। শুধু তাই নয় সাবমেরিনগুলো ডিজেল এবং বিদ্যুত্চালিত। এগুলো কনভেনশনাল আঘাত ও পারমাণবিক আঘাতে পারদর্শী। তাদের মোট নৌসম্পদ আছে ১২১টি। এর মধ্যে ফাইটার ৬টি, করভেটস ১টি, পেট্রোল ক্রাফটস ২২টি।
এ ছাড়াও দেশটি প্রাকৃতিক শক্তিতে সমৃদ্ধ। তাদের যে পরিমাণ মজুদকৃত তেল আছে তা অনেক বড় ধরনের সাপোর্ট বলে মনে করা হয়। এটাকে তাদের জীবনীশক্তি হিসেবে দেখা হয়। যুদ্ধাস্ত্রে ব্যবহৃত যে কোনো ধরনের তেল দেশটির কাছে আছে। পাশাপাশি দেশটিতে প্রতিদিন ১৬০ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়।
৬.সৌদি আরব:
অস্ত্র আমদানিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয়কারী দেশ হচ্ছে সৌদি আরব। দেশটিতে এমন কিছু অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র রয়েছে যেগুলো মার্কিন সেনাবাহিনীতেও প্রচলন হয়নি।সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর পাশাপাশি রয়েছে এয়ার ডিফেন্স, স্ট্র্যাটেজিক ফোর্স ও ন্যাশনাল গার্ড নামে পৃথক বাহিনী। আকাশপথে শত্রুর মোকাবিলার জন্য ফাইটারসহ হামলা চালাতে সক্ষম এমন বিমান রয়েছে চার শতাধিক। সামরিক হেলিকপ্টার ২২৭টি, প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে ২৪৩টি।স্থলযুদ্ধের জন্য আছে এক হাজর ১৪২টি ট্যাংক, সাঁজোয়া যান আছে ৫ হাজার ৪৭২টি, অটোমেটিক ও সাধারণ কামান মিলে রয়েছে মোট ৯৫৪টি। এ ছাড়া রকেট প্রজেক্টর আছে ৩২২টি। সামরিক নৌযানের মধ্যে সৌদি আরবের রয়েছে ৭টি ফ্রিগেট, ৪টি করভেটস, ১১টি টহল সামরিক জাহাজ ও ৩টি মাইন অপসারণ যান।সৌদি আরবের অর্থনীতি মূলত তেলনির্ভর। দেশটির জাতীয় বাজেটের ৭৫ শতাংশ এবং রফতানি আয়ের ৯০ শতাংশ আসে তেল থেকে। সমগ্র বিশ্বের ভূগর্ভের অভ্যন্তরে খনিজ তেলের যে মজুদ রয়েছে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগই সৌদি আরবে, পরিমাণে যা ২৬ হাজার কোটি ব্যারেল। তেল ছাড়াও দেশটির রয়েছে গ্যাস ও স্বল্পপরিসরের স্বর্ণখনি।
৭.ইন্দোনেশিয়া:
ইন্দোনেশিয়া- পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ-২০২২
বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত ইন্দোনেশিয়া। দেশটির ৮৮ শতাংশ মানুষ মুসলিম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে রয়েছে ছোট বড় প্রায় ১৩ হাজারের অধিক দ্বীপ। সামরিক দিক থেকে মুসলিম দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান বেশ সম্মানজনক স্থানে রয়েছে। দেশটি নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ অস্ত্র দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি ও ইংল্যান্ড থেকে ক্রয় করে থাকে। পাশাপাশি নিজস্ব প্রযুক্তিতে দেশেও অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন করে থাকে। ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনী প্রধান ব্যাটল হিসেবে অত্যাধুনিক লিওপার্ড ট্যাংক ব্যবহার করে।
ইন্দোনেশিয়া জাতির জন্য বর্তমান সামরিক ক্ষমতা এবং উপলব্ধ হলো অগ্নি শক্তি।জনশক্তি - সামরিক সরঞ্জামের সমষ্টি এবং অনুভূত যুদ্ধ শক্তি অতিক্রম করা হচ্ছে। একটি প্রকৃত সামরিক শক্তি একটি প্রদত্ত সামরিক শক্তি চালায়। ইন্দোনেশিয়ার সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫০ জন। রিজার্ভ আছে ৫ লাখ ৪০ হাজার। যুদ্ধবিমান ৪৭৮টি, ট্যাংক ৪১৮টি ও যুদ্ধজাহাজ ২২১টি। সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীও বেশ শক্তিশালী। ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীতে ৪টি সাবমেরিন রয়েছে এবং বর্তমানে আরো একটি নির্মাণাধীন রয়েছে। এ ছাড়াও অত্যাধুনিক ফ্রিগেট ও করভেট অন্তর্ভুক্ত আছে।
৮.বাংলাদেশ:
২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ চীন থেকে পাঁচটি মেরিটাইম পেট্রোল ভেসেল, দুটি করভেট, ৪৪টি ট্যাংক, ১৬টি জেট ফাইটার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ৩৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত মোট কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার ও সংরক্ষিত বাহিনীতে রয়েছে ৬৫ হাজার কর্মী। দেশের প্রতিরক্ষা বাজেট হিসেবে রাখা হয় ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার। সম্প্রতি বাংলাদেশের নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’ নামে দুটি সাবমেরিন। টর্পেডো ও মাইন বহনকারী এই সাবমেরিন শত্রুজাহাজ ও অন্য সাবমেরিনকে আঘাত আনতে পারবে।
সমরশক্তি বাড়াতে নৌবাহিনীতে রাখা হয়েছে মোট ১৬৬টি এয়ারক্রাফট। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৪৫টি, অ্যাটাক এয়ারক্রাফট ৪৫টি এবং হেলিকপ্টার রয়েছে ৬১টি। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মোট ট্যাংক রয়েছে ৫৩৪টি। সাঁজোয়া যান রয়েছে ৯৪২টি, ১৮টি স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি গান এবং ৩২টি রকেট প্রজেক্টর। ন্যাভাল অ্যাসেট হিসেবে আছে চারটি করভেট ও দুটি সাবমেরিনসহ ৯১টি তরী।
শত্রু মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যবহার করছে ৬টি ফ্রিগেট।এ ছাড়াও আছে ৯৪২টি বিভিন্ন ধরনের সাঁজোয়া যান, ১৮টি কামান ও ৩২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের যান। ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ চীন থেকে পাঁচটি মেরিটাইম পেট্রোল ভেসেল, দুটি করভেট, ৪৪টি ট্যাংক, ১৬টি জেট ফাইটার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে। সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ নামে পাঁচ বছর মেয়াদি চার ধাপের একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর প্রথম ধাপ ২০১১-২০১৫ সফলতার সঙ্গে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপ ২০১৬-২০২০ বাস্তবায়নাধীন। তৃতীয় ধাপ ২০২১-২০২৫ এবং চতুর্থ ধাপ ২০২৬-২০৩০ সালে বাস্তবায়ন করা হবে।
বর্তমানে দ্বিতীয় ধাপের অংশ হিসেবে সামরিক অস্ত্র কেনা হচ্ছে। সরকার গত পাঁচ বছরে সামরিক খাতে কেনাকাটার জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি করেছে। এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ১৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকার অস্ত্র, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে সুনাম কুড়িয়েছে। এদের অনেকেই আছেন বিদেশ থেকে উন্নতমানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
৯.মালেশিয়া':
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর মুসলিম দেশের তালিকায় 9 নম্বরে রয়েছে মালেশিয়া।মালেশিয়ার সামরিক বাজেট 4 বিলিয়ন us dollars. তাদের মোট সৈন্য সংখ্যা এক লক্ষ দল হাজার। মালেশিয়ার যুদ্ধ বিমান রয়েছে 170 টি। তবে তাদের বিমান বাহিনীতে কোনো অ্যাটাক হেলিকপ্টার নেই। তাদের যুদ্ধ ট্যাংক রয়েছে মাএ 74 টি।
মালেশিয়ার নৌবাহিনীতে মোট যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে 61 টি। তাদের নৌবহনে কোনো এয়ার ক্রাপ্ট ক্যারিয়ার নেই।আর বলা যায় মালেশিয়া অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের থেকেও এগিয়ে থাকলেও তাদের সামরিক শক্তি বাংলাদেশ থেকেও অনেক দুর্বল।
১০.দুবাই:
দুবাইয়ের সামরিক বাজেট 22 বিলিয়ন US Dollars.আর এটি ছোট দেশ হিসেবে অনেকটাই বেশি। সামরিক দিক দিয়ে দুবাই তুরস্কের থেকেও অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করে থাকে। কিন্তু দুবাইয়ের সৈন্য সংখ্যা মাএ 64 হাজার।আর মজার ব্যাপারটি হলো এইসব সৈন্য অন্য দেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসা। এবং দুবাইয়ের নিজস্ব কোনো সৈন্য নেই বললেই চলে। দুবাইয়ের যুদ্ধ ট্যাংক রয়েছে ৪৩৪ টি, যুদ্ধ বিমানের সংখ্যা ৫৬৪ টি। অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে 30 টি।তাদের মোট যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে 75 টি এবং দুবাইয়ের নৌবাহিনী তেমন একটা শক্তিশালী নয়।
Follow us: Facebook
No comments