চীনের নারীরা কেন আঙ্গুল ভেঙ্গে পা ছোট রাখে? Behind History of Foot Binding in China
👉চেহারায় নয়, নারীর সৌন্দর্য পায়ে—এমনটাই মনে করতেন সেকালের চীনারা।
যে নারীর পা যত ছোট সে তত সুন্দরী। তাইতো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দেশটিতে অদ্ভুত এক রীতি চলছে। বয়স চারের কোটা পেরোনোর আগেই মেয়েদের পায়ের পাতা জোর করে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। এক মাস কিংবা ১ বছর নয়, পুরো ১০ বছর এভাবে বাঁধা থাকতো। যাতে বড় হলে পায়ের দৈর্ঘ্য ৩ থেকে ৪ ইঞ্চির বেশি না হয়।
ইতিহাস বলছে, প্রাচীন চীনে মেয়েদের সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে বেশি গুরুত্ব পেত ছোট পা। তবে কেন এবং কীভাবে এই যন্ত্রণাদায়ক অমানবিক প্রথা চালু হয়, সে গল্প অনেকেরই অজানা। তাই তা নিয়ে আছে বহু মত। তবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মতের কথা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ৯৬০ খ্রিস্টাব্দে।
Tazza trendz এর আজকের এই পর্বে, আপনাদের জানাব এমনই এক ভয়ংকর প্রথা, যে প্রথায় ৩ বা ৪ বছর হলেই সকল কন্যাশিশুদের আঙ্গুল ভেঙ্গে পা ছোট রাখা হতো! তাহলে চলুন, আর দেরী না করে শুরু করা যাক।
চীনের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক কু মো রো তার এক বইতে উল্লেখ করেন, ৯৬০-১২৭৯ সালে সং বংশের রাজত্বকালে রাজ দরবারের নর্তকীদের মধ্যে প্রথম এই প্রথা চালু হয়। সে সময়ে সং রাজবংশের রাজকুমার লি ইউ এক নর্তকীর প্রেমে পড়েন। তার নাম ইয়াও নিয়াং। বলা হয়, ছোট পা হওয়ার জন্য নাচের সময় তাকে দেখতে দুর্দান্ত লাগতো। সেই থেকে সবাই নিজের পা ছোট করতে উঠে পড়ে লাগলো।
আবার, অনেকেই বলত, পা ছোট নারীদের বিয়ে করার প্রতিযোগিতায় নামতেন ধনীরা। ঠিক সেই কারনেই ধনীর ঘরে বিয়ে দিতে নির্মমভাবে পা ছোট করে রাখার কুপ্রথা চালু ছিল তৎকালীন যুগে।
এইবার অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগবে, পায়ের পাতা ছোট করতো কিভাবে? আসুন, এইবার তাই জানা ঝাক!
বেশ কষ্টসাধ্য ও নির্মম একটি কাজ এটি। প্রথাটি এতোই ভয়ংকর ছিল যে, মাত্র ৩-৪ বছর বয়সেই কন্যা শিশুদের মা-দাদি এই ব্যান্ডেজ করে দেন। এর জন্য প্রথমে উষ্ণ ভেষজ ও পশুর রক্তে পা ভিজিয়ে রাখা হতো। কারণ এসব উপকরণ ব্যবহার করলে পা আরো নরম হয়।
তারপর ঘটতো, সেই পৈশাচিক কান্ডটি। কেটে ফেলা হত নখ। কোমলমতি কন্যা শিশুদের পায়ের আঙুলগুলো নিচের দিকে বাঁকিয়ে ভেঙে ফেলা হতো। হাড় ভাঙার যন্ত্রণায় শিশুরা অনেক আকুতি মিনতি করলেও কোনো প্রকার লাভ হতো না। সেই অবস্থাতেই শক্ত ব্যান্ডেজে মুড়ে ফেলা হত পা। ব্যান্ডেজ এমন ভাবে বাঁধা হত, যাতে ভাঙা হাড় জোড়া লাগার কোনো অবকাশই না থাকে।
এখানেই শেষ নয়। বেশিরভাগ শিশুর পায়ে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যেত। পচন ধরারও ঘটনা অহরহ শোনা যেত। হাড় ভাঙ্গা শিশু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ ছিলনা স্বজনদের। বরং খুশিই হতেন পরিবারের লোকজন। কারণ পায়ে পচন ঝরলে, আঙুল খসে পড়ে যাবে। তাতে পা আরো ছোট লাগবে! অনেকের পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধার সময় কাঁচের টুকরো বা আলপিন লাগানো হতো। এতে খুব দ্রুত পায়ে পঁচন ধরে।
পা ছোট না হলেও ছিল বিপদ! কারণ পায়ের পাতা বড় হলে বিয়ে হতো না। পা ছোট হলেও তো বিপদ থেকে রক্ষা নেই! পায়ের পাতা ছোট হওয়াতে মেয়েরা ঠিকমতো হাঁটতে পারত না।
ইতিহাস বলছে, এইসব সংক্রমন ও পচনের ফলে অনেক তরুণী মৃত্যুবরণ করেছেন। তবুও থেমে ছিলনা এই ভয়ংকর নির্মম প্রথাটি।
চলুন, এইবার জানা ঝাক যে কবে এবং কিভাবে এই নির্মম কু-প্রথার অবসান ঘটল??
১৯ শতকের গোড়ার দিকে চীনে মোট নারী জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরই পা ছোট ছিল। শুধু অভিজাতদের মধ্যেই সংখ্যাটি ছিল প্রায় ১০০ শতাংশ। তবে ১৬৪৪ সাল থেকে মাঞ্চু চিং বংশ ক্ষমতায় এলে পা ছোট করে রাখার কুপ্রথা নিষিদ্ধ হয়। তার বদলে নৌকার মতো দেখতে উঁচু হিলের জুতা চালু হয়।তবু এ প্রথা থেকে ফেরানো যাচ্ছিল না চীনা অধিবাসীদের। ১৯০০ সালের পর থেকে এই নির্মম প্রথার বিরোধিতা করতে শুরু করেন দেশটির মুসলমানরা। রাজতন্ত্রের অবসানের পর চীনে প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯১২ সালে আইন করে পা ছোট করার কুপ্রথা নিষিদ্ধ হয়।
আজ এই পযর্ন্তই। Blog টি শেষ পযর্ন্ত দেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। দেখা হবে আরও একটি নতুন Blog এ। ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ সবাইকে ভালো রাখুক সুস্থ রাখুক। আল্লাহ্ হাফেজ।
So Horrible Incident 😢
ReplyDelete