তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে !!
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উভয় পক্ষের হাজার হাজার সেনা প্রাণ হারিয়েছে। ইউক্রেনে মৃত্যু হয়েছে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের। ধ্বংস হয়ে গেছে ছোট-বড় বহু শহর। এই সংঘাতের জেরে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে সারা বিশ্বে। আজ এক বছর পরেও সেই যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। বরং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
আমরা এখন একটা আত্মধ্বংসের যুগে বাস করছি। এ যুগের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ থেকেই যদি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান, তাহলে আগামী দিনের ঐতিহাসিকেরা অবশ্যই গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ স্মরণ করবেন। দুই প্রেসিডেন্টের বাগ্যুদ্ধ উল্লেখ করবেন। এর এক পক্ষে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের পাষাণ হৃদয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যিনি ওয়াশিংটন থেকে কিয়েভে উড়ে যান ইউক্রেনীয়দের সংগ্রামে তাঁর আমৃত্যু সমর্থন ঘোষণার জন্য। আর অন্য পক্ষে থাকবেন কর্কশ হৃদয়ের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে দুই প্রেসিডেন্টের কারও ভাষণেই আশ্বস্ত হওয়ার মতো কিছু পায়নি বিশ্ব। বাইডেন তাঁর বক্তব্যে অবরুদ্ধ ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের দেওয়া অতিরিক্ত ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর এই ভাষণের পরপরই পেন্টাগন থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে মেইন ব্যাটল ট্যাংকস হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যে ধীরে চলো নীতি তারা নিয়েছিল, সেখান থেকে তারা সরে আসবে। এর অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ভান্ডারে মজুত থাকা ট্যাংক থেকে কিয়েভের কাছে অগ্রসর প্রযুক্তির ট্যাংক হস্তান্তর করা হবে।
অন্যদিকে পুতিনের ভাষণ ছিল দুই ঘণ্টা দীর্ঘ। তাঁর ভাষণে তিনি যথারীতি ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পূর্ণ জয়ের ব্যাপারে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একইভাবে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ‘শয়তানের উপাসক’ ও ‘মর্ষকামী’ হয়ে দুনিয়া শাসন করছে।
এটা বিস্ময়ের বিষয় নয় যে বেশির ভাগ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম পুতিনের এই ভাষণ প্রচার করেনি। সীমিত যে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম তা প্রচার করেছে, তা-ও ছিল উপহাসমূলক। পুতিন তাঁর ভাষণে যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ় অঙ্গীকারই ব্যক্ত করেননি, সংঘাত তীব্র করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। পুতিন মনে করেন, আমেরিকা সংঘাতে উত্তেজনা উসকে দিচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে, ন্যাটোর ওপর এই প্রথম বড় ধরনের হুমকি তৈরি করলেন পুতিন। তিনি তাঁর প্রতিপক্ষ মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে বলেন, ইউক্রেন থেকে যদি যুক্তরাষ্ট্র তাদের দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা না সরায়, তাহলে রাশিয়ার সেনারা সেটাকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাবে।
কয়েকদিন আগে প্রেসিডেন্ট পুতিনের এক সাবেক মুখপাত্র, সের্গেই মারকভ, যিনি এখন মস্কোর ইন্সটিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের একজন পরিচালক তিনি বলেন- ইউক্রেনে এখন যে যুদ্ধ, সেটি তার ভাষায়, আসলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেটোর যুদ্ধ। তার মতে, ইউক্রেনের এই হাইব্রিড যুদ্ধ কার্যত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক সৈয়দ ইফতেখার আহমেদ অবশ্য এই যুদ্ধকে এখনই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলতে রাজি নন, তবে এরকম একটা যুদ্ধের সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
এটা হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নয়। কিন্তু এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যে মেরুকরণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে করে যুক্তরাষ্ট্র হতে শুরু করে ইউরোপের অনেক দেশই কিন্তু পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। রাশিয়ার অনেক নীতি নির্ধারকও মনে করেন, রাশিয়া এখন পশ্চিমাদেশগুলোর বিরুদ্ধে লড়ছে। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটা হুমকি যে তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আগামী দিনের ঐতিহাসিকেরা আমাদের সময়ের রাষ্ট্রনেতারা কেন এমন নির্বোধের মতো আচরণ করেছিলেন, তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নিশ্চিতভাবেই দ্বিধায় পড়ে যাবেন। তাঁরা উল্লেখ করবেন যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যে ভাষণ দিয়েছেন, সেই ভাষণই এই সংঘাতকে বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
এক কথায়, আমেরিকা এবং রাশিয়া একে অপরের দিকে গুলি শুরু করলে তা হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
No comments