দেউলিয়া হওয়ার মুখে পাকিস্তান | Financial Crisis in Pakistan
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে এগোচ্ছে! মুদ্রাবাজারে ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে উঠছে পাকিস্তানি রুপি। গত দুই সপ্তাহে মুদ্রাটির অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিশ্বের পঞ্চম সর্বোচ্চ জনসংখ্যা বিশিষ্ট দেশ পাকিস্তানের ভাঁড়ারে এই মুহূর্তে মাত্র ৩৭০ কোটি ডলার অবশিষ্ট রয়েছে। যে অর্থে মাত্র তিন সপ্তাহের আমদানির খরচ চালানো সম্ভব।
দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য সরকারের পরিকল্পনার অভাবকেই দায়ী করেছে আমেরিকার অর্থনৈতিক সংস্থা। রিপোর্টে বলা হয়েছে বর্তমানে পাকিস্তানে বৈদেশিক মুদ্রার শোধ করতে হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীকে!
শ্রীলঙ্কার স্মৃতি এখনও তাজা। এরই মধ্যে পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কায় রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, পাকিস্তান যদি ঋণ শোধ করতে না পারে দেশটি দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কা হতে পারে। একটি দেশ ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, তখন তাকে সার্বভৌম ঋণ শোধে ব্যর্থতা হিসাবে দেখা হয়।
এর ফলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে একাধিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। যেমন ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার দিতে হয় বেশি। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করতে অস্বীকার করে। অর্থনীতিবিদরা উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তানে এই ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান কারণ হল দেশটির কোনও অভ্যন্তরীণ সম্পদ তৈরি করতে না পারা।
পাকিস্তানের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল, তার একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন, তাঁদের দেশের ঋণদাতাদের টাকা শোধ করার জন্য কোনও সংস্থান নেই। এমতাবস্থায় অন্য ঋণ পরিশোধের জন্য অপর কোনও পাওনাদারের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এখন যদি পাকিস্তান বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ভবিষ্যতে অন্য দেশ থেকেও ঋণ পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়বে।
পাকিস্তানের অর্থনীতির কিছু রিসার্চ পেপারে বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধের জন্য বারবার ঋণ নেওয়া দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কট গভীরে রয়েছে। ঋণ সঙ্কট বেড়ে যাওয়ায়, অর্থনৈতিক চাপ এখন একেবারে সাধারণ মানুষের উপর এসে পড়েছে। বর্তমানে পাকিস্তান সরকার কম আমদানি করা থেকে শুরু করে মল এবং বিবাহের হলগুলিকে তাড়াতাড়ি বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
বিদ্যুৎ তথা জ্বালানি সাশ্রয় করতে দেশে ফ্যান ও বৈদ্যুতিক বাল্ব তৈরি করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী এবং অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি দেখা যেতে পারে পাকিস্তানে।
কয়েকদিন আগে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পরামাণ শক্তিধর দেশ হয়েও ভিক্ষা করা লজ্জাজনক বলে তাৎপর্য মন্তব্য করেছিলেন তিনি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য পূর্বতন ইমরান খান সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার পাকিস্তানে এসে পৌঁছবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের আইএমএফ দল। তাঁরা পাকিস্তানের সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন।
ডলারের তুলনায় পাকিস্তানি মুদ্রার অবমূল্যায়ন, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি এবং জ্বালানির অভাব। মধ্যবিত্তের অবস্থা ক্রমশ আরও খারাপ। দেশে যত শ্রমিক ছিলেন, তাঁদের মধ্যে বহু মানুষ কাজ না পেয়ে ভিক্ষুক হয়ে যাচ্ছেন, এমনই ভয়ঙ্কর কথা জানাচ্ছে পশ্চিমের একাধিক সংবাদমাধ্যম। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে কি? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।
আমাদের Youtube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন আর Facebook কে আমাদের ফলো করুন । ধন্যবাদ সবাইকে!
No comments