ঘুমের রহস্যময় গ্রাম, যেখানে যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ে মানুষ!
ঘুম, এই বিলাসহীন বিনোদনে আগ্রহ নেই এমন মানুষের সংখ্যা এ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সুযোগ পেলেই মনে হয় ঘুমের দেশে পাড়ি দিই। সে ছাত্রজীবন হোক বা কর্ম জীবন, ঘুমের বিকল্প কিন্তু কিছুই নেই।
তাই বলে যখন তখন হঠাৎ ঘুমিয়ে যাওয়া, তাও আবার টানা কয়েকদিন পযর্ন্ত ! কি বিষয়টি অবাক করার মতো তাইনা???
Tazza Trendz এর আজকের এই পর্বে আপনাদের এমনই এক গ্রামের কথা বলব। যেখানে মানুষ রহস্যময় ভাবে কয়েকদিন পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। কেউ হয়তো দোকানে খরিদারি করছেন, সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লেন। অথবা কেউ হয়ত ড্রাইভিং করছেন, আর সেখানেই হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ছেন!
অথচ কেউই ক্লান্ত নয়। কারও ঘুম ভাঙছে ছয়-সাত ঘণ্টা পরে, কখনও কেটে যাচ্ছে তিন-চার দিনও! এক দিন নয়, বছরের পর বছর ধরে ঘটছে এই ঘটনা।
এ যেন রূপকথার ঘুমন্ত রাজপুরীর বাস্তব রূপ। বলছি মধ্য এশিয়ার দুটি গ্রাম কলাচি আর ক্রাসনোগোর্স্ক এর কথা । বলা নেই, কওয়া নেই, এখানে মানুষ কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। এবং আশ্চর্যের ব্যাপার হলো,ঘুম থেকে উঠলে মনে থাকে না আগের স্মৃতি। বিস্মরণের সঙ্গে থাকে মাথাব্যথা আর দুর্বলতা। কারও কারও রক্তচাপ বেড়ে যায় মাত্রাহীন ভাবে। হ্যালুসিনেশনের পাশাপাশি অনেকের স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এরকমও হচ্ছে, যে এক এক জন সারা দিনে মোট ৬ বার ঘুমিয়ে পড়ছেন।স্কুল, কাজের জায়গা, বাড়ি, সর্বত্র একই উপসর্গ।
ক্লান্তি আর শ্রান্তি। তারপর দু চোখ জুড়ে নেমে আসছে শীতল ঘুম। শুধু মানুষ নয়। এই ঘুমরোগের শিকার পশুপ্রাণীরাও। ঘরে ঘুমোচ্ছে মানুষ, বাইরে পোষ্যরা।
তারপর বিষয়টি সবার নজরে আসে। পরে ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারটি নিয়ে গবেষণা শুরু করে দেয়। তারা মাটি, পানি, বাতাস, এমনকি রোগীদের রক্ত, নখ এবং চুল মিলিয়ে প্রায় সাত হাজারের মত পরিক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে।
কিন্তু ফলাফল শূন্য। তারা গ্রামের সব ধরনের সংযোগ লাইনের দিকে মনোযোগ ও নজর দেয়। আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যাসের লাইনের সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি মোবাইলের নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়। পানির সাপ্লাই লাইনে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করা হয়। কিন্তু কোন যোগ সুত্র খুজে পাওয়া যায় না।
এর পর তারা গ্রাম থেকে প্রায় দুই মাইল দূরের এক ইউরেনিয়াম খনি নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা শুরু করে দেয়। গ্রামদুটির কাছেই আছে ইউরেনিয়াম খনি। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার আমলে এটি ছিল সমৃদ্ধ খনি। এখন পরিত্যক্ত। কিন্তু এই খনিজের ফলে গ্রামের বাতাসে বেড়েছে কার্বন মনোক্সাইড আর হাইড্রোকার্বন। কমেছে অক্সিজেন। ফলে স্থানীয় বাসিন্দা সহজেই শ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। ঘুমিয়ে পড়ছেন।
তবে যাই হোক না কেন, যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ার এই ঘটনাটা অবাক করার মতো। ইনসোমনিয়ায় ভোগা কোনো ব্যক্তি কালাচি গ্রামে হাজির হলে কি তাঁর রোগ সেরে যাবে? বিষে বিষক্ষয়? কে জানে!
No comments