ইসলামে শূকরের গোশত হারাম কেন? | Why pork is haram in Islam | Tazza Trendz
ইসলামে শূকরের গোশত হারাম কেন? | Why billions of people won't eat pork | Why pork is haram in Islam
মহান আল্লাহ তায়ালার একমাত্র মনোনীত ধর্মের নাম ইসলাম। মুসলমানদের চলাফেরা ও খাওয়া দাওয়া সবকিছুরই নিয়ম ইসলামে রয়েছে। এবং সকল মুসলমানরাই তাদের দ্বীন ইসলামের উপর কাটানোকে পরম কর্তব্য মনে করেন।
সৃজনশীল এই ধর্মে রয়েছে সুশৃংখল নিয়ম-কানুন, রয়েছে নানা ধরণের বিধি নিষেধ। বিধি নিষেধগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শুকরের মাংস। ইসলামের বিধি মোতাবেক কোন মুসলমান শুকরের মাংস থেতে পারবে না।
প্রিয় viewers! মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন। এই কুরআন শরীফের সূরা আরাফের ১৫৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: আল্লাহ তাদের জন্য উত্তম জিনিস হালাল করেছেন আর খাবাইস বা নিকৃষ্ট জিনিস হারাম করেছেন।’ এখানে ‘খাবাইস’ দ্বারা ওই সমস্ত জিনিস উদ্দেশ্য করা হয়েছে যা মানুষের শারিরিক, মানসিক, চারিত্রিক বা আর্থিক ক্ষতিসাধন করে। সুতরাং যে জিনিসই মানুষের জন্য কোনো ক্ষতিকর ফল বয়ে আনে তাই ‘খাবাইস’র অন্তর্ভুক্ত হবে।
সুরা বাকারার আয়াত ১৭৩, সুরা মায়েদার আয়াত ৩ নম্বরে, সূরা: আনআম, আয়াত: ১৪৫ নম্বরে এবং আরোও অনেক আয়াতে বর্নিত রয়েছে মুসলমানরা শুকরের মাংস, মৃত প্রানী অথবা এমন প্রানী যেসব প্রানী কোরবানি করার সময় আল্লাহ্ র নাম বাদে অন্য কোনো নামে কোরবানী করা হয়নি। এসব প্রানীকে ইসলামে হারাম বলা হয়েছে।
সুপ্রিয় দর্শক, মুলত এখানেই শুকুরের মাংসকে হারাম বলা হয়েছে। জগতে যতপ্রকার ক্ষতিকর জীবানু রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জীবানু ভান্ডার হলো শুকরের মাংস। তাতে রয়েছে এক প্রকার ধ্বংসাত্মক এবং মানব হত্যাকারী বিষাক্ত ও সর্বাপেক্ষা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। শুকরের মাংসটাই মানুষের শ্বাসের জন্য চরম ক্ষতিকর। এছাড়াও ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে শুকর অশ্লীলতায় নির্লজ্জতম প্রাণী।
পবিত্র কোরআন ছাড়া বাইবেলেও শুকরের গোশত নিষেধ করা হয়েছে। এবং book of leviticus এর ১১ নম্বর অধ্যায়ের ৭ এবং ৮ নাম্বার লাইনে শুকরের মাংস খেতে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছে, ‘এবং শুকর যদিও তার খুর দ্বিখন্ডিত এবং খুরযুক্ত পদ বিশিষ্ট। এমন কী সে চিবিয়ে খায়, যাবর কাটে না। তবু ওটা অপরিচ্ছন্ন অপবিত্র তোমার জন্য।’
বিভিন্ন ধর্মীয়গ্রন্থ ব্যতীতও বিজ্ঞানের মাধ্যমেও আজ প্রমাণিত যে শূকরের মাংস মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মানব দেহের উপর শূকর খাওয়ার বিভিন্ন অপকারিতা সাব্যস্ত করেছে; যেমন-
সমপ্রতি পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারাপ্রমাণিত হয়েছে যে, শুকরের মাংস শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়ক। তাই চিকিৎসকগণ এই ক্ষতিকর প্রাণীটির মাংস খাওয়ার ব্যাপারে মানুষকেজোরালোভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন। বর্তমানে ইউরোপেও শুকরের মাংস আহার করা থেকে বিরত থাকারজন্য শক্তিশালী দাবী উঠেছে। তারা বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ব্যাখ্যা সাপেক্ষে শুকরের মাংস থেকে ট্রিচিনিয়াসিস নামক এক প্রকার কৃমির জন্ম দেয়, যার কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যুও ঘটে। ট্রিচিনেলা স্পাইরালিস নামক সূতার মত এক প্রকার কৃমির মুককীট রোগাক্রান- শুকরের মাংসে অবস্থান করে।
শুকরের মাংসের মাধ্যমে টিনিয়া সোলিয়াম নামক অন্য এক ধরনের কৃমিও সহজে মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করে। কয়েক ফুট লম্বা এই ফিতা কৃমি শুকরের মাংসের ভিতরে অবস্থান করে।
তাছাড়াও বিভিন্ন প্রাণীর গোশতের মধ্যে শূকরের গোশতে সবচেয়ে বেশি চর্বিযুক্ত কোলেস্টেরল রয়েছে। মানুষের রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া শূকরের গোশতে থাকা ‘ফ্যাটি এসিড’ অন্য সকল খাদ্যে থাকা ফ্যাটি এসিড থেকে ভিন্নরকম ও ভিন্ন গঠনের। তাই অন্য যেকোনো খাদ্যের তুলনায় মানুষের শরীর খুব সহজে একে চুষে নেয়। যার ফলে, রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যায়। যেমন- Rheumatology (বাতরোগ) ও জয়েন্টের ব্যথা।
পরিশেষে বলা যায় যে, কোরআনে শূকর হারাম হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে এটি ‘রিজ্স’। মানুষের সুস্থ বিবেক ও শরিয়ত কর্তৃক নিন্দনীয় যেকোনো জিনিসকে আরবিতে ‘রিজস’ বলা হয়। শূকরের গোশত হারাম হওয়ার কারণ হিসেবে এটিই যথেষ্ট। এছাড়াও খাদ্য-পানীয়জাতীয় বস্তু হালাল বা হারাম হওয়ার জন্য যে সাধারণ মূলনীতি ঘোষণা করা হয়েছে তার আলোকেও শূকরের গোশত হারামের আওতায় পড়ে।
শুকরের গোশত ভক্ষণের ফলে মানুষ যেমন ভোগ করবে ইহকালীন রোগবালার কষ্ট তেমনি ভোগ করবে জাহান্নামে চিরকালীন আযাব। তাই আমাদের কোনোভাবেই আল্লাহর নিষেধ অমান্য করে কোনো কাজ করা উচিত নয়। তাহলেই আমাদের ইহকাল ও পরকাল উভয় শান্তির হবে।
No comments